স্ত্রীকে মেরে মাঠিচাপা; বস্তাবন্দী অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার



কক্সবাজারের উখিয়া থানাধীন তচ্ছাখালী খাল থেকে বস্তাবন্দী অর্ধগলিত নারীর লাশ উদ্ধারের ঘটনার প্রধান আসামী জসিম উদ্দিন (ভিকটিমের স্বামী)’কে চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৫ এর আভিযানিক দল*

গত ১৩ নভেম্বর ২০২৫খ্রিঃ কক্সবাজারের উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের তচ্ছাখালী খাল থেকে উখিয়া থানা পুলিশ এক নারীর বস্তাবন্দী অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। নিহত নারীর নাম রহিমা আক্তার (৩০)। তিনি উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আমির হোসেনের মেয়ে এবং পাশ^বর্তী হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মরিচ্যা সাকিনের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন (৩৫), পিতা-জাফর আলম, মাতা-নূরজাহান, সাং-পশ্চিম মরিচ্যা, ১নং ওয়ার্ড, হলদিয়াপালং ইউপি, থানা-উখিয়া, জেলা-কক্সবাজার এর স্ত্রী। পরিচয় সনাক্তের পর তার পরিবার জানায় তিনি গত ০৬ নভেম্বর ২৫খ্রিঃ তারিখ রাত ১১ টা থেকে নিখোঁজ ছিলেন। ফলে ঘটনাটি এলাকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

এরই পেক্ষিতে উক্ত ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে র‌্যাব-১৫ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে ছায়া তদন্ত শুরু করে।


নিহত ভিকটিম রহিমা আক্তার এর সাথে আসামী জসীম উদ্দিনের প্রায় ১০ বছর পূর্বে বিয়ে হয়। বিয়ের পর হতে আসামী জসীম উদ্দিন তার শ^শুর বাড়িতেই থাকতেন। উক্ত হত্যাকান্ডের ২-৩ মাস পূর্ব হতে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া ও পারিবারিক কলহ চলে আসছিল। প্রধান আসামী জসিম উদ্দিন প্রায় সময় ভিকটিমকে তালাক প্রদান ও প্রাণ নাশের হুমকি দিতেন। গত ০৬ নভেম্বর ২০২৫খ্রিঃ জসিম উদ্দিন তার স্ত্রীকে শ^শুর বাড়ি নেওয়ার কথা বলে সন্ধ্যার সময় একসাথে বের হয়। এরপর তাদের অবস্থান জানা যায়নি। ভিকটিমের পরিবার ভিকটিমকে অনেক খোঁজাখুজি করতে থাকে এবং জসিম উদ্দিনের বাড়িতে গেলে তাদের ঘরে কাউকে পায়নি। পরবর্তীতে ১৩ নভেম্বর ২০২৫খ্রিঃ সন্ধ্যায় উখিয়া তচ্ছাখালী খালের পানিতে একটি বস্তাভর্তি একটি লাশ ভাসার সংবাদ পেয়ে ভিকটিমের পরিবার ও আত্ম্রীয়-স্বজনেরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশটি রহিমা আক্তারের বলে সনাক্ত করেন। ঘটনার পর হতে আসামী জসিম উদ্দিন পলাতক রয়েছেন। পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করতঃ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের মা সেলিনা আক্তার বাদী হয়ে এজাহারনামীয় ৫ জনসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় একটি হত্যা মামলার এজাহার দাখিল করেন।


এরইপ্রেক্ষিতে র‌্যাব-১৫ উক্ত চাঞ্চল্যকর ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত আসামীদের সনাক্তপূর্বক গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রাখে। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এজাহারনামীয় ১নং আসামীর অবস্থান নিশ্চিত হয়ে গত ০১ ডিসেম্বর ২০২৫খ্রিঃ রাতে ব্যাটালিয়ন সদর, র‌্যাব-১৫, কক্সবাজার এর একটি আভিযানিক দল র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম ও স্থানীয় সোর্সের সহায়তায় চট্টগ্রাম জেলার বোলায়খালী থানাধীন পূর্ব গোমদন্ডী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার মূলহোতা ভিকটিমের স্বামী জসিম উদ্দিন’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভিকটিম রহিমা এর সাথে আসামীর দীর্ঘদিন পারিবারিক কলহ চলে আসছিল। ফলে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াসহ হাতাহাতি হতো। পরবর্তীতে আসামী জসিম তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী এজাহারনামীয় ৪নং আসামী মোবারকের সহযোগীতায় ভিকটিম রহিমা আক্তারকে তার শ^শুর বাড়িতে নেওয়ার কথা বলে বাড়ির পাশে একটি খালি জমিতে নিয়ে হাত-পা ধরে গলায় চুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে  মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়। পরদিন এলাকাবাসী ঘটনাস্থলের আশেপাশে রক্ত দেখে সন্দেহ করলে জসিম উদ্দিন তার মৃত গরু উক্ত স্থানে পুতেঁ রেখেছে মর্মে জানায়। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে সন্দেহ ও কানাঘুষা শুরু হলে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার জন্য ঐ দিন রাত ১০-১১ টার মধ্যে জসিম তার সহযোগী মোবারককে নিয়ে মাটি থেকে লাশ তুলে বস্তাবন্দী করে তচ্ছাখালী খালে ভাসিয়ে দেয়।

আসামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র‍্যাবের মিডিয়া কর্মকর্তা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ