ওয়েবসাইটে সক্রিয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা মোজাম্মেল; পাওনাদারের টাকা শোধ করতে গিয়ে মধ্যস্থতাকারী ঋণগ্রস্ত
নিজস্ব প্রতিবেদনঃ
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে দোকানের লাইসেন্স দেওয়ার নাম করে এক চাঞ্চল্যকর প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। র্যাব-১৫ এ কর্মরত থাকাকালীন মোজাম্মেল হক (বিপি-৮৮০৮১২৫২৯২) নামে এক কনস্টেবল জেলা প্রশাসনের নামে ভুয়া তিনটি বিচ কার্ড তৈরি করে স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত মোজাম্মেল এখন পর্যন্ত ভুক্তভোগী ও তার সহকর্মীর কাছে দায়বদ্ধ থাকলেও, টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া নিয়ে মিথ্যাচার করছেন।
| র্যাব কর্মকর্তা মোজাম্মেলের পরিচয় |
ভুয়া কার্ড বিক্রির কৌশল ও তথ্য উধাও
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কনস্টেবল মোজাম্মেল হক ২০২৪ সালে র্যাবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ডিসি অফিসের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে তিনটি ভুয়া বিচ দোকানের কার্ড সংগ্রহ করেন। এগুলো ছিল ফিশ ফ্রাই, খাবার ও ঝিনুক বিক্রির দোকান (কার্ড নং ১৬৫, ৪১৩, ৪১৪)। প্রতিটি কার্ড ২ লাখ টাকা করে মোট ৬ লাখ টাকায় তিনি তিন জন স্থানীয় বাসিন্দার কাছে বিক্রি করেন।
ভুক্তভোগী আব্দুল করিম জানান, প্রশাসনের লোক হওয়ায় তারা কার্ডগুলো যাচাই না করেই মোজাম্মেলকে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেন। প্রতারক মোজাম্মেল টাকা নেওয়ার আগে কার্ডগুলো ডিসি অফিসের ওয়েবসাইটে 'অ্যাক্টিভেশন' অবস্থায় স্ক্যান করে দেখিয়েছিলেন। কিন্তু টাকা লেনদেনের পরদিনই ওয়েবসাইট থেকে সেই কার্ডগুলোর তথ্য উধাও হয়ে যায়, যা প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
তন্মধ্যে ৫০ হাজার টাকা বীচে দোকান বসাতে সহায়তার নামে র্যাব কর্মকর্তা মোজাম্মেল নুরুল হক, জয়নাল সহ ৩ জনের সিন্ডিকেটকে দেন বলে জানান।
মধ্যস্থতাকারীর ক্ষতি ও ঋণগ্রস্ত জীবন
আব্দুল করিম জানান, কার্ড বিক্রির সময় মোজাম্মেল তার সহকর্মী দীপু ও পরিচিত আজিজকে 'জিম্মি' রেখেছিলেন। কার্ড ভুয়া প্রমাণিত হলে মোজাম্মেল ফোন ধরা বন্ধ করে দেন। ফলে সামাজিক চাপে পড়ে মধ্যস্থতাকারী আজিজের ওপর টাকা ফেরতের দায় চাপে।
ঘটনার অন্যতম সাক্ষী আব্দুল আজিজ জানান, মানবিক কারণে তিনি মধ্যস্থতা করেছিলেন। কিন্তু প্রতারণার খবর জানার পর তিনি "অনেক কষ্ট করে পরিবারের কাছ থেকে ধারদেনা করে ৬ লাখ টাকা ভুক্তভোগীদের ফেরত দিয়ে দেন।" মোজাম্মেলের প্রতারণার কারণে আজিজ বর্তমানে নিজেই ঋণগ্রস্ত।
আইনি প্রক্রিয়ায় টালবাহানা ও প্রকাশ্যে হুমকি
ভুক্তভোগীরা আইনি পথে গেলে অভিযুক্ত মোজাম্মেলের টালবাহানা শুরু হয়। গত ২৮ এপ্রিল, ২০২৫ সালে মিরপুরের পল্লবী থানায় অনুষ্ঠিত সালিশি বৈঠকে ৫ মে টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিলেও তিনি তা রাখেননি। এরপর তিনি বারবার সময় নিতে থাকেন, সর্বশেষ ২৮ সেপ্টেম্বর টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
টাকা ফেরতের তারিখ নিয়েও মোজাম্মেল মিথ্যাচার করেছেন। তিনি দৈনিক পূর্বকোণকে জানান, পাওনাদার পক্ষ নির্ধারিত ২৮ সেপ্টেম্বর তার সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি। তবে ভুক্তভোগী আজিজের মোবাইল রেকর্ড যাচাই করে দেখা যায়, মোজাম্মেলকে মেসেঞ্জার ও ফোনে শতবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
জানা যায়, থানা থেকে বের হওয়ার পর কনস্টেবল মোজাম্মেল প্রকাশ্যে আজিজকে মেরে ফেলার হুমকিও দেন।
অতীতেও অভিযুক্ত, বর্তমানে নীরব
র্যাব-১৫ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) নিশ্চিত করেছেন যে, মোজাম্মেল হক ১৭ নভেম্বর ২০২৪ সালে র্যাব-১৫ থেকে ঢাকার মিরপুরের পল্লবী থানায় বদলি হন। সিও জানান, মোজাম্মেলের চাকরির বেশিরভাগ সময়ই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ ছিল।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) শাহেদুল ইসলাম জানান, "এরকম ভুয়া কার্ড বানিয়ে কেউ বিতরণ করলে বা কোনো কর্মকর্তা সুবিধা নিয়ে কার্ড বিতরণ করলে সেটির লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" তবে অভিযুক্তের বর্তমান কর্মস্থল পল্লবী থানার ওসি নজরুল এবং মিরপুর-১ এর ডিসির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মোজাম্মেলের এই প্রতারণা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থায় বড় ধরনের ফাটল ধরাতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
.png)
0 মন্তব্যসমূহ