কক্সবাজার প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলের তারকা মানের সায়মন বিচ রিসোর্ট-এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত 'ন ডরাই সার্ফিং ক্লাব'-কে ঘিরে বেরিয়ে এসেছে ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের অন্ধকার জগৎ। ক্লাবের প্রশিক্ষক কর্তৃক দীর্ঘদিন ধরে তিন কিশোরী সার্ফারকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ক্লাব পরিচালনায় যুক্ত সায়মন কর্তৃপক্ষ আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্টদের।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে কিশোরী সার্ফারদের উপর ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ। তিনি জানান, অভিযোগটি পাওয়ার পরপরই জেলা পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশ যৌথভাবে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে এবং ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের কাজ দ্রুততার সাথে চলছে।
ভুক্তভোগী কিশোরীর অভিযোগ, ক্লাবের প্রশিক্ষক মোহাম্মদ হাসান ওরফে সাগর (সদস্য নম্বর ৯০১৩) তাদের ক্লাব, হোটেল এবং প্রশিক্ষকের ব্যক্তিগত বাসায় নিয়ে গিয়ে দিনের পর দিন ধর্ষণ করেছেন। হুমকি দেওয়া হয়েছিল—কাউকে জানালে ক্লাব থেকে বের করে দেওয়া হবে, এমনকি প্রাণে মেরে ফেলা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্লাবটির এক সাবেক সদস্যের দাবি, মূলত দরিদ্র পরিবারের কিশোরীদের সার্ফিং শেখানোর নামে ক্লাবে টেনে এনে যৌন নিপীড়নের ফাঁদে ফেলা হতো। অভিযোগ রয়েছে, মাঝে মাঝে বিদেশি অতিথিদের সঙ্গেও এই কিশোরীদের পাঠানো হতো।
ভুক্তভোগীরা সাহস করে বিষয়টি সায়মন কর্তৃপক্ষকে জানালে, ন্যায়বিচারের বদলে তাদের চুপ থাকতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়। যদিও পরে ধর্ষণের শিকার তিনজনের ভিডিও জবানবন্দি একবার হোটেলে রেকর্ড করা হয়।
এ বিষয়ে সায়মন রিসোর্টের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক মোরসালীন চৌধুরী বাংলাদেশ সার্ফিং অ্যাসোসিয়েশনকে পাঠানো এক ইমেইলে তিন কিশোরীর ধর্ষণের ঘটনাটি স্বীকার করেছেন। তিনি ইমেইলে জানান, অভিযুক্ত প্রশিক্ষক মোহাম্মদ হাসান ওরফে সাগরের সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে (যা ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর)।
তবে মৌখিক আলাপে সায়মন হোটেলের অন্য এক কর্মকর্তা আসাদ নুর উল্টো সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য জোর দিয়ে বলেন। অভিযুক্তকে ক্লাব থেকে বাদ দেওয়ার কথা জানালেও তিনি বলেন, "আপনি যদি সংবাদ প্রকাশ করেন, তাহলে তিন ভিকটিম কিশোরীকে সবাই চিনে ফেলবে। তাদের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।" শুধু তাই নয়, একপর্যায়ে তিনি টাকার বিনিময়ে সংবাদ বন্ধের প্রস্তাব দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এমন গুরুতর অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নড়েচড়ে বসেছে।
প্রসঙ্গত, অলিম্পিক ইভেন্ট হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত সার্ফিংয়ের প্রসারে বাংলাদেশ সার্ফিং অ্যাসোসিয়েশন কাজ করে যাচ্ছে। সেই খেলায় যুক্ত থাকা কিশোরীদের এমন ভয়াবহ পরিণতি, স্থানীয় ক্রীড়াঙ্গন ও পর্যটন এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর প্রশ্ন তুলছে।

0 মন্তব্যসমূহ