কক্সবাজারে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে পর্যটন বিকাশে গণমাধ্যমের প্রভাব শীর্ষক সভা অনুষ্ঠিত



পর্যটন বিকাশে বাধা ‘চাঁদাবাজি ও নিরাপত্তা সংকট’, গণমাধ্যমকর্মীদের ইতিবাচক ভূমিকা চাইলেন বক্তারা


নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে নিরাপত্তা সংকট, হোটেল ব্যবসায়ীদের হয়রানি ও রাজনৈতিক চাঁদাবাজি বড় বাধা সৃষ্টি করছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বক্তারা। একইসাথে এই নেতিবাচক চিত্র পাল্টে দিতে গণমাধ্যমকর্মীদের আরও বেশি ইতিবাচক ও গঠনমূলক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

জাতীয় গণমাধ্যম 'নিউজ ভিশন'-এর ১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২৯ অক্টোবর (বুধবার) কক্সবাজার জেলা পরিষদ মিলনায়তনে 'পর্যটন শিল্পের বিকাশে গণমাধ্যমের ভূমিকা' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব বিষয় উঠে আসে।


পর্যটকদের বীতশ্রদ্ধ হওয়ার মূল কারণ

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ। তিনি বলেন, পর্যটকদের সাথে হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের অসৌজন্যমূলক আচরণ কক্সবাজারের প্রতি তাদের আগ্রহ কমাচ্ছে। তিনি সুস্পষ্টভাবে কয়েকটি সংকটের কথা উল্লেখ করেন:

  • 'গলাকাটা' হোটেল ভাড়া: অতিরিক্ত ও অযৌক্তিক হোটেল ভাড়া।

  • কৃত্রিম রুম সংকট: ইচ্ছাকৃতভাবে রুম সংকট তৈরি করে বেশি দামে বিক্রি।

  • পচা খাবার পরিবেশন: সৈকতে ফিশ ফ্রাইয়ের নামে পচা বা নিম্নমানের খাবার পরিবেশন।

  • আন্তরিকতার অভাব: বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যদের আন্তরিকতার অভাব।

অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ মনে করেন, প্রতিটি দপ্তরের উচিত পর্যটকদের সেবায় নিয়োজিত থাকা এবং সৈকতকে পরিচ্ছন্ন রাখা। তিনি পর্যটন বিকাশে গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকাকে 'অন্যতম' হিসেবে উল্লেখ করেন।


রোহিঙ্গা, চাঁদাবাজি ও নিরাপত্তাহীনতার উদ্বেগ

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার-৩ আসনের সাবেক সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোঃ শহীদুজ্জামান। তিনি কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে 'বিশ্বের চেয়ে আকর্ষণীয় ও স্বয়ংসম্পূর্ণ' উল্লেখ করলেও, 'পরিকল্পিত উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও সচেতনতার অভাব'-এর কারণে এই দীর্ঘতম সৈকতকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না বলে হতাশা প্রকাশ করেন।

নিরাপত্তা প্রসঙ্গে সাবেক সাংসদ দুটি গুরুতর সংকটের কথা তুলে ধরেন:

১. রোহিঙ্গা প্রভাব: কক্সবাজার জেলায় প্রায় দেড় মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে, যা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে।

২. সৈকতে বিশৃঙ্খলা: টোকাই, ভবঘুরে, তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি ও হকারদের উৎপাতের কারণে একজন ট্যুরিস্ট সৈকতে ৫ মিনিটও শান্তিতে বসতে পারেন না। এই বিশৃঙ্খলাই বিদেশী পর্যটকদের কক্সবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার প্রধান কারণ।

তিনি আরও বলেন, রাজনীতিবিদরা যদি দেশ রক্ষার কাজ না করে বরং চাঁদাবাজি করেন, তবে পর্যটন শিল্প বিকাশে বাধা সৃষ্টি হবে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে, অনেকেই নিজেদের লোকজনকে দিয়ে পর্যটন এলাকায় চাঁদাবাজি করেন।

এদিকে, কক্সবাজার সদর সার্কেল অফিসার আহমেদ পেয়ার তার বক্তব্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানান। তিনি বলেন, "ছিনতাইকারী বা অপরাধী গ্রেফতার হয়, কিন্তু কিছুদিন পরই জামিনে জেল থেকে বের হয়ে যায়।" এই আইনি দুর্বলতা অপরাধ দমনে বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।


গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা জরুরিঃ

আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে নিউজ ভিশনের সম্পাদক রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকাকে অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকা ছিল, আছে ও থাকবে। পর্যটন বিকাশে নিউজ ভিশন সবসময় পজিটিভ ভূমিকা নিয়ে এগোচ্ছে ও সামনে এ নিয়ে কাজ করবে।"

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার সিআইডির পুলিশ সুপার মোঃ মনিরুজ্জামান, সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা আশেক উল্লাহ, কোস্ট ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, ট্রাক মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক এস্তাফিজুর রহমান, জেলা কৃষকদলের সভাপতি এস এম গিয়াস উদ্দিন সহ এনজিও কর্মী, গণমাধ্যমকর্মী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ। বক্তারা সকলে একমত হন যে, কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে বিশ্বমানের করে তুলতে সকল অংশীজনকে একযোগে কাজ করতে হবে এবং নেতিবাচক খবর পরিবেশনের পাশাপাশি পর্যটন-বান্ধব ইতিবাচক উদ্যোগগুলো তুলে ধরে গণমাধ্যমকে সেতু বন্ধনের কাজ করতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ