নামেই 'ক্লোজডোর': সৌদিয়া বাসের বিরুদ্ধে যাত্রী হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগ

 

সৌদিয়া বাস । ছবি সংগৃহীত


মুনাফার লোভে পথে পথে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছে; ২ মিনিটের কথা বলে ১ ঘণ্টার বেশি অপচয়, ম্যানেজমেন্টের চাপে কর্মীরা


বিশেষ প্রতিবেদক:

কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী সৌদিয়া পরিবহনের একটি বাসের বিরুদ্ধে 'ক্লোজডোর সার্ভিস'-এর নামে যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা ও হয়রানির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। পথে কোথাও না থেমে সরাসরি গন্তব্যে পৌঁছানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও এই বাসটি লোকাল সার্ভিসের মতো ৭ থেকে ৮টি কাউন্টারে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলায় যাত্রীদের মূল্যবান দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় নষ্ট হচ্ছে।

শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে কক্সবাজার বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রা শুরু করা সৌদিয়া বাস (কোচ নং ১২৬)-এর যাত্রীরা এই ভোগান্তির শিকার হন।


প্রতিশ্রুতির নামে প্রতারণা: ৭টি স্টপেজ

বাসটির টিকিট বিক্রির সময় যাত্রীদের নিশ্চিত করা হয় যে এটি একটি 'ক্লোজডোর' সার্ভিস, অর্থাৎ গন্তব্যের আগে এটি কোথাও থামবে না। কিন্তু বাস্তবে যাত্রা শুরুর মাত্র দেড় কিলোমিটার পরই লিংকরোডে এসে বাসটি ১৫ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। এরপর একে একে রামুর গোলচত্বরে অবস্থিত অস্থায়ী কাউন্টারে ১২ মিনিটের বেশি, ঈদগাহে ৮-৯ মিনিট, এবং চকরিয়া পুরাতন বাস টার্মিনালে ৫-৬ মিনিট দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া হয়। এবং লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ সহ অন্যান্য কাউন্টারেও বার বার দাঁড়িয়ে যাত্রীদের সময় নষ্ট সহ বিভিন্ন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে এই পরিবহন কোম্পানির বিরুদ্ধে।

এছাড়াও, চকরিয়া বানিয়ারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির কাছাকাছি পৌঁছানোর পরও বাসের চেকার ইফতেখার বাস থামিয়ে লোকাল যাত্রী তোলেন।

বাধ্য হয়ে প্রতিবাদ জানালে যাত্রীদের সঙ্গে বাসের কর্মীদের বর্কিবতণ্ডা শুরু হয়। যাত্রীদের অভিযোগ, ৭-৮টি কাউন্টারে বারবার থেমে দীর্ঘ সময় নষ্ট করায় নামমাত্র ক্লোজডোর সেবাটি এখন 'যাত্রী ভোগান্তির অপর নাম' হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাসের একাধিক যাত্রী জানান, "৭-৮টি কাউন্টারে ১ ঘণ্টার বেশি দাঁড়ানোর পাশাপাশি মাঝপথে ৩-৪ জন চেকার গাড়িতে উঠে হিসেব-নিকেশ করায় আরও ১৫-২০ মিনিট সময় নষ্ট হয়। সব মিলিয়ে এটি নামেই ক্লোজডোর, বাস্তবে লোকাল গাড়ির চেয়েও খারাপ সেবা।"

ম্যানেজমেন্টের চাপেই হয়রানি, বলছেন চালকরা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ড্রাইভার ও হেলপার জানান, যাত্রীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা ও মারামারির মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এর প্রধান কারণ, উর্দ্ধতন ম্যানেজমেন্টের নির্দেশনা থাকে—গাড়ি ভর্তি না হলেও পথে কাউন্টারে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিপূর্ণ করতে হবে।

কর্মীরা জানান, "আমরা চাকরি করি, ম্যানেজমেন্টের কথা শুনতে বাধ্য। তাদের নির্দেশনা হলো, যাত্রী পরিপূর্ণ করার জন্য প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে বেশি দাঁড়াতে হলেও কিছু যায় আসে না।" ম্যানেজমেন্টের এমন মুনাফামুখী চাপের কারণেই কাউন্টারের কর্মকর্তারা নিয়মের তোয়াক্কা না করে যাত্রী হয়রানির মধ্য দিয়ে এই 'ক্লোজডোর' সেবা চালু রেখেছেন।


কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে অস্পষ্টতা:

এ বিষয়ে সৌদিয়া কল সেন্টারের দায়িত্বরত মুফিদুল আলম ওয়াহিদ প্রথমে স্বীকার করেন যে, ক্লোজডোর গাড়ির কোনো কাউন্টারে ২ মিনিটের বেশি দাঁড়ানোর এবং পথে পথে যাত্রী নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করলে তিনি দায়িত্ব এড়িয়ে সৌদিয়া বাসের প্রধান নির্বাহী (সিইও) মোঃ ফখরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন এবং বিস্ময়করভাবে কোনো সরকারী বা ভোক্তা অধিকার দপ্তরে অভিযোগ না করার অনুরোধ করেন।

সৌদিয়া বাসের প্রধান নির্বাহী মোঃ ফখরুল জানান, সৌদিয়া কাউন্টারে সর্বোচ্চ ২-৫ মিনিট দাঁড়ানো হয় এবং পথে পথে যাত্রী নেওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। তবে ক্লোজডোর এবং স্বাভাবিক গাড়ির মধ্যে পার্থক্য জানতে চাইলে তিনি কেবল 'নির্দিষ্ট কাউন্টারে দাঁড়াবে' বলেই মন্তব্য করেন, কিন্তু লোকাল গাড়ির সঙ্গে এর স্পষ্ট তফাৎ কী, তা তিনি পরিষ্কার করেননি।

কর্তৃপক্ষের এই অস্পষ্টতা এবং স্ববিরোধী বক্তব্য প্রমাণ করে, সৌদিয়া পরিবহন জেনে বুঝেই ক্লোজডোর সেবার নামে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উচিত, অবিলম্বে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া এবং যাত্রীদের হয়রানি বন্ধ করার দাবি জানান যাত্রী সহ সচেতন মহল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ