‎মহেশখালীতে কোস্টগার্ডের অভিযান চলাকালীন তাদের সোর্স পুলিশের হাতে আটক





চট্টগ্রাম অফিসঃ

‎মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ শাহ ঘোনা গ্রামে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করেছে কোস্টগার্ডের নেতৃত্বে যৌথবাহিনী। অভিযানে সোর্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে পলাতক আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ও হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামীদের। তাদের হাতে দেশীয় তৈরি অস্ত্র দেখা যাওয়ার ভিডিও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অভিযান শুরুর আগেই সোর্স হিসেবে থাকা আবু বক্কর নামক হত্যাসহ একাধিক মামলার পলাতক আসামীকে গ্রেপ্তার করে মহেশখালী থানা পুলিশ।




মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুরুল হক বলেন, আবু বক্কর নামের একজনকে কালারমার ছড়া বাজার থেকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রয়েছে৷ আরও মামলা আছে কিনা আমরা খতিয়ে দেখছি। তিনি আরও বলেন , প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছি আবু বক্কর একজন কোস্টোগার্ডের সোর্স হিসেবে কাজ করে।



‎শনিবার (১৮অক্টোবর) দুপুর ১২ থেকে বিকেল পর্যন্ত কক্সবাজার মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া বাজারের পশ্চিমপার্শ্বে মোহাম্মদশাহঘোনা গ্রামে চট্টগ্রামে ছাত্রআন্দোলনে শহীদ তানভীরের বসতবাড়ি ও আশপাশের খালবিলের ধানক্ষেত ও পান বরজে অভিযান চালায় কোস্টগার্ডের নেতৃত্বে যৌথবাহিনী। ওইসময় সোর্স হিসেবে পলাতক আ'লীগ দোসর ও হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামীদের ব্যবহার করার অভিযোগ করেন প্রত্যেক্ষদর্শীরা।




এর আগেও গেল ২০ মার্চ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামিদের সঙ্গীয় সোর্স হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠে কোস্টগার্ডের বিরুদ্ধে। সেই ছবিও মুহুর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় না আলোচনা-সমালোচনা। সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে কোস্ট গার্ডের সোর্স নামে পরিচিত আনছার উল্লাহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আনছার উল্লাহর ব্যবহৃত অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়।




তারা জানান, ওইসব সোর্সের হাতে দেশীয় তৈরি অস্ত্র থাকায় আতঙ্কে ছিল স্থানীয়রাসহ বিলে ধানক্ষেত ও পানবরজে কর্মরত কৃষকরা। তবে অভিযান শুরুর পূর্বে সোর্স হিসেবে থাকা কালারমারছড়ার ব্যবসায়ী ও যুবদলনেতা তোফাইল হত্যাসহ একাধিক মামলার পলাতক আসামী আবু বক্কর নামক একজনকে আটক করে টহলরত কালারমারছড়া পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা।




বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ তানভীর ভাই যুবদলনেতা মিজানুর রহমান মাতাব্ব অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামীলীগের তান্ডবে ও নির্যাতনের কারণে আমরা ১৭ বছর ধরে তাদের ঘরবাড়িকে থাকতে পারিনি। এ দীর্ঘ সময়ে আমাদের শত শত একর জায়গা জায়গা-জমি দখল করে ভোগ করেছে। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর আমরা বসবাস শুরু করি। কিন্তু আমরা এখনো শান্তিতে নেই। একেরপর এক মহেশখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক শরীফের মোটা অংকের টাকার বিনিময় আওয়ামীলীগ বিরোধী পরিবারের উপর প্রশ্নবিদ্ধ অভিযান পরিচালনা করে হয়রানি করছে।




সমন্বিত প্রবাসী বাংলাদেশি ঐক্য পরিষদের সৌদি আরবের সভাপতি ফয়সাল মাহমুদ ফেইসবুকে লিখেন, মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ শাহ ঘোনা গ্রামে আমার জন্ম। এ গ্রামটি একদম বাজারের সঙ্গে লাগোয়া। আজকে কোস্টগার্ড আমার গ্রামে অভিযান পরিচালনা করেছে, আগেও কয়েকবার করেছে। এবারের অভিযানে চট্টগ্রামের চিহ্নিত দুই সাংবাদিককে তারা নিয়ে গেছেন। একজন ডিবিসি নিউজের মাসুদ আলম ও অন্যজন সময় টিভির পার্থ প্রতিম বিশ্বাস। দুইজনই ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এরমধ্যে একজন হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকনের সদস্য। অভিযানের সময় তারা দুজন লাইভে গিয়ে বলছে, কোস্টগার্ড মহেশখালীর দুর্গম এলাকায় সন্ত্রাসী আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করছে। দুর্গম এলাকা কাকে বলে? কারো বসতবাড়ি কি সন্ত্রাসী আস্তানা কিনা? কোস্টগার্ডও স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে তাদেরই এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। আমি এক কোটি টাকার চ্যালেঞ্জ করতে চাই কোস্টগার্ডকে, তারা স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের পতরের পর কোন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ছাত্রলীগ নেতাকে মহেশখালী থেকে গ্রেপ্তার করেছে কিনা? উপরন্তু আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের প্রত্যক্ষ মদদে আমার গ্রামে অভিযান পরিচালনা করছে। সন্ত্রাসী কি সব মোহাম্মদ শাহ ঘোনা গ্রামে। এ এলাকার বিএনপি জামায়াতের সবাই কি সন্ত্রাসী? আরে জানোয়ারের দল আওয়ামী লীগের শাসনামলে দীর্ঘ ১৭ বছর এ মানুষগুলো ঘর ছাড়া ছিল। নতুন বাংলাদেশে তারা নতুনভাবে জীবন শুরু করেছে। আমার গ্রামে অভিযানের নামে আবারও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের প্রতিষ্ঠিত করতে মরিয়া কোস্টগার্ড লীগ। এর আগেও কোস্টগার্ড অভিযান পরিচালনা করে আবু চাচাকে গুলি করে হত্যা করে। পরে আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে যথাযথ প্রমাণসহ অভিযোগ দিলে তখনকার দায়িত্বরত সব কোস্টগার্ড সদস্য প্রত্যাহার হয়। তবে, আমরা আবু চাচা হত্যার বিচার আল্লাহর দরবারে দিয়েছিলাম। এ হত্যাকাণ্ডের পর কিছুদিন চুপ ছিল কোস্টগার্ড লীগ। এখন আবারও আমার গ্রামে অভিযানের নামে জুলুম শুরু করেছে। এটি আল্লাহ সইবে না। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এ যথাযথ প্রতিকার চাইবো। আমার গ্রামের একজন সদস্য বেঁচে থাকতে কোন আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীকে প্রতিষ্ঠিত হতে দিবো না।




এদিকে অভিযানের পর আটকৃতদের ও অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে কক্সবাজারের শহরের নুনিয়ার ছড়া ঘাট সংলগ্ন অস্থায়ী ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কোস্টগার্ড। সেখানে একাধিক হত্যা মামলার আসামি সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী আনছার উল্লাহ কিভাবে কোস্টগার্ডের সোর্স হিসেবে এতদিন কাজ করেছে এমন প্রশ্ন করা হলে কোস্টগার্ডের এক কর্মকর্তা জানান, তার মামলা ও অপরাধ সম্পর্কে আমরা জানতাম না। আজকেও কোস্টগার্ডের অভিযানে দেশীয় অস্ত্রসহ হত্যা ও বিভিন্ন মামলার আসামিদের দেখা গেছে এমন প্রশ্ন করা হলে সেটি এড়িয়ে যান তারা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ