শাহজালাল বিমানবন্দরের এয়ারফিল্ড সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা; এমিরেটস-এয়ার আরাবিয়াসহ ৪ আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চট্টগ্রামে
ঢাকা অফিসঃ
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে পুরো দেশের আকাশপথে যোগাযোগে তীব্র অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। দুপুর সোয়া ২টার দিকে বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের কাছে অবস্থিত এই কমপ্লেক্সে আগুন লাগার পরপরই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জরুরি সতর্কতা জারি করে এবং সাময়িকভাবে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে। এই সিদ্ধান্তের সরাসরি প্রভাব পড়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরে। সন্ধ্যা নাগাদ কক্সবাজার বিমানবন্দর সূত্র নিশ্চিত করে যে, ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ঢাকাগামী সব ধরনের ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। এর ফলে এই রুটের শত শত যাত্রী আটকা পড়েন এবং তাদের ভ্রমণসূচি বাতিল বা পরিবর্তিত হয়।
আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ডাইভারশন ও সময়সূচির পরিবর্তন
ঢাকার এয়ারফিল্ড সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বন্ধ থাকায় বহু আন্তর্জাতিক ফ্লাইটকে দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরে ডাইভার্ট করা হয়েছে। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এই ডাইভার্টেড ফ্লাইটগুলোর প্রধান ভরসাস্থল হয়ে ওঠে। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল জানান, মোট আটটি ফ্লাইট চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ব্যাংকক থেকে ঢাকাগামী এবং এয়ার আরাবিয়ার মধ্যপ্রাচ্য থেকে ঢাকাগামী দুটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। এছাড়াও ইউএস-বাংলা এবং বিমান বাংলাদেশের আরও চারটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চট্টগ্রামে ডাইভার্ট হয়েছে। অন্যদিকে, ঢাকা থেকে দুবাইগামী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে-৫৮৭ ফ্লাইটের সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত তিনটায় পিছিয়ে নেওয়া হয়। এই ব্যাপক ডাইভারশন ও সময় পরিবর্তন আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনসগুলোর ওপরও বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে নৌবাহিনী ও ৩৬ ইউনিটের সমন্বিত অভিযান
বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত এবং সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম নিশ্চিত করেন যে, ফায়ার সার্ভিসের মোট ৩৬টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত ছিল। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দুটি ফায়ার ইউনিটও দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযানে যুক্ত হয়। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, অগ্নিকাণ্ডটি পার্কিং স্ট্যান্ড ১৪-এর কাছে ঘটলেও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ায় সব বিমান নিরাপদে আছে। সাময়িকভাবে ফ্লাইট বন্ধ রাখার এই সিদ্ধান্ত বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা এড়াতে সহায়ক হয়েছে।
দেশের বিমান চলাচলে অচলাবস্থা
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো প্রধান কেন্দ্র বন্ধ থাকায় দেশের পুরো আকাশপথের কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসে। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও, ডাইভার্টেড ফ্লাইটের কারণে সেখানে চাপ বেড়ে যায়। এই অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি কেবল যাত্রীদের দুর্ভোগই বাড়ায়নি, বরং বিমানবন্দরগুলোর জরুরি ব্যবস্থাপনা এবং দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এয়ারফিল্ড চালু হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব ফ্লাইট শিডিউল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হবে।
0 মন্তব্যসমূহ