'মিনি বান্দরবান' নামে পরিচিতি: কক্সবাজারের অদেখা পাহাড়ি পথে নতুন পর্যটনকেন্দ্রের সম্ভাবনা



উঁচু-নিচু গোয়ালিয়া-মরিচ্যা সড়কে ভিড়, তবে সুযোগ-সুবিধার অভাবে সন্ধ্যা নামতেই ফিরে যাচ্ছেন পর্যটকেরা

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

পর্যটন শহর কক্সবাজারের সমুদ্রের লোনাজল আর বালুচর দেখার বাইরেও এখন পর্যটকদের আগ্রহের কেন্দ্রে চলে এসেছে এক নতুন পাহাড়ি পথ। রামু উপজেলায় অবস্থিত ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ 'গোয়ালিয়া-মরিচ্যা সড়ক' তার আঁকাবাঁকা পথ আর সবুজ প্রকৃতির কারণে পরিচিতি পেয়েছে 'মিনি বান্দরবান' নামে। প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো পর্যটক ভিড় করছেন এই নতুন গন্তব্যে।

সড়কটি কক্সবাজার শহর থেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে উখিয়ার রেজুখাল সেতু পেরিয়ে পূর্ব দিকে প্রসারিত হয়েছে। সড়কের পাশে টাঙানো দিকনির্দেশক সাইনবোর্ডে স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে 'মিনি বান্দরবান'। সড়কটি ধরে তিন কিলোমিটার এগোলেই পাহাড়চূড়ায় দেখা মেলে 'গোয়ালিয়া পার্ক' এবং আরও কিছুটা সামনে রয়েছে 'মিনি চিম্বুক' নামে আরেকটি পাহাড়।

পাহাড়ি আমেজ ও তুলনার ভিন্নতা

গোয়ালিয়া পার্ক ও মিনি চিম্বুকে খোলা জিপ, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল নিয়ে আসা পর্যটকদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। দুপাশে সুপারিবাগান, ধান ও সবজির ক্ষেত এবং পাখির কিচিরমিচির ডাক পর্যটকদের মুগ্ধ করছে।

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক সাজিদুর রহমান বলেন, "যারা কখনো বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ির মনোরম দৃশ্য দেখেননি, তাঁদের অপূর্ণতা কিছুটা হলেও ঘোচাবে এই পর্যটন এলাকা।"

তবে অভিজ্ঞ পর্যটকদের মতে, আসল বান্দরবানের সঙ্গে এর পার্থক্য বিশাল। পর্যটক বিলকিস আকতার বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বান্দরবানের নীলাচল প্রায় দুই হাজার ফুট উঁচু, কিন্তু গোয়ালিয়ার পাহাড় বড়জোর ৮০ ফুট। তিনি স্বীকার করেন, দেখতে বান্দরবানের সড়কের মতো মনে হওয়ায় এই নামকরণ করা হয়েছে। আরেক পর্যটক মকবুল আহমদ বলেন, "বান্দরবানের চিম্বুক সাত-আট হাজার ফুট উঁচু, সেখানে পাহাড়ি বাজার, ঝরনা রয়েছে; এখানে তার কিছুই নেই। তবে সমুদ্রসৈকত দেখতে আসা পর্যটকদের জন্য এটি আনন্দের মাত্রা কিছুটা বাড়াবে।"

নতুন পর্যটনকেন্দ্রের সম্ভাবনা ও অবকাঠামোগত ঘাটতি

খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল হক জানান, সাত-আট বছর আগে স্থানীয়দের সুবিধার জন্য এই সড়কটি নির্মাণ করা হয়, যা মেরিন ড্রাইভকে আরাকান সড়কের মরিচ্যা বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। সড়কটি দেখতে বান্দরবানের মতো হওয়ায় এটি 'মিনি বান্দরবান' নামে পরিচিতি লাভ করে। বর্তমানে দৈনিক ৫০০ থেকে ২ হাজার পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন।

কিন্তু পর্যটকের সংখ্যা বাড়লেও এই এলাকা এখনো অবকাঠামোগতভাবে অত্যন্ত দুর্বল। ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় পর্যটকেরা জানান:

  • পর্যটকদের জন্য শৌচাগার, বিশ্রামাগার বা মানসম্পন্ন খাবারের দোকান নেই।

  • নিরাপত্তার জন্য দিনের বেলা পুলিশের টহল থাকলেও রাতের বেলায় পুরো এলাকা অন্ধকারে ডুবে থাকে

  • নিরাপত্তাহীনতার কারণে পর্যটকেরা সন্ধ্যার আগেই মিনি বান্দরবান ত্যাগ করতে বাধ্য হন।

কক্সবাজার হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, সরকারি উদ্যোগে এই এলাকায় শৌচাগার, রেস্তোরাঁ ও কটেজ নির্মাণ করা গেলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি পর্যটকের সমাগম আরও বাড়বে। অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলেই কেবল 'মিনি বান্দরবান' পর্যটনশিল্পে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ