‘বিএনপি-আ.লীগ-জাতীয় পার্টি ‘ভাই ভাই’ মন্ত্রে বিএনপি নেতার বক্তব্য

 

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি জামাল মাহমুদ চৌধুরী
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি জামাল মাহমুদ চৌধুরী

রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ: কক্সবাজারে ‘ভাই ভাই’ মন্ত্রে ধানের শীষে ভোট!


কক্সবাজার: ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
জাতীয় রাজনীতিতে যখন আওয়ামী লীগ (আ.লীগ) এবং বিএনপি বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে, ঠিক সেই সময়েই কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে ভেসে উঠল এক ভিন্ন সুর। এখানে এক মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতার পক্ষে প্রচারণায় নেমে স্থানীয় এক নেতা প্রকাশ্যেই ঘোষণা করলেন: ‘বিএনপি-আ.লীগ-জাতীয় পার্টি ভাই ভাই, ধানের শীষে ভোট চাই।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতিতে এখন তীব্র সমালোচনার ঝড়।

জানা গেছে, এই বক্তব্যটি দিয়েছেন কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি জামাল মাহমুদ চৌধুরী। সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীর সম্ভাব্য মনোনয়নকে সামনে রেখে তিনি স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে পাড়া-মহল্লায় প্রচারণায় অংশ নিচ্ছিলেন।

প্রচারিত ভিডিওতে যা দেখা যায়

ভাইরাল হওয়া ভিডিও ক্লিপটিতে দেখা যায়, হাতে ছবি-সংবলিত লিফলেট নিয়ে জামাল মাহমুদ চৌধুরী জনসমক্ষে দাঁড়িয়ে বলছেন, "বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি, আমরা সবাই ভাই ভাই। শাহজাহান চৌধুরীর পক্ষে ধানের শীষে ভোট চাই।"

তিনি আরও দৃঢ়ভাবে বলেন, "আগামী নির্বাচনে শাহজাহান চৌধুরীকে সবাই ভোট দিয়ে জাতীয় সংসদে পাঠাব ইনশাআল্লাহ।" বক্তব্যের শেষে বিএনপির এই প্রার্থীর বিজয়ের জন্য মোনাজাতও করা হয়।

এই মন্তব্যের ভিডিও দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দলের সর্বস্তরের কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের মধ্যেও শুরু হয় গুঞ্জন। জাতীয় পর্যায়ের দলীয় নীতি ও অবস্থানের বিপরীতে গিয়ে এমন বক্তব্য কতটা যৌক্তিক— সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।

দলীয় নেতাকর্মীদের ক্ষোভ ও উদ্বেগ

উখিয়া উপজেলা বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, যখন দেশের বিভিন্ন স্থানে দলের নেতাকর্মীরা এখনো মামলা-হামলার শিকার, আন্দোলন-সংগ্রামে অনেকের রক্ত ঝরেছে, তখন ক্ষমতাসীন দল এবং তাদের সহযোগী জাতীয় পার্টিকে ‘পুনর্বাসনের’ এমন চেষ্টা জাতির সঙ্গে এক প্রকার বেইমানি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র বিএনপি নেতা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, "বিএনপিকে দুর্বল করতে অথবা ভোটের মাঠে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতেই এমন ইচ্ছাকৃত বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। রক্ত ও লাশের গন্ধ মুছে যাওয়ার আগেই স্বৈরাচারী শাসনের দোসরদের ভাই বলে সম্বোধন করা বিএনপির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।"

নেতার নিজস্ব সাফাই

এই বিতর্কিত বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা জামাল মাহমুদ চৌধুরী তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি জানান, তারা পাড়ায় পাড়ায় ধানের শীষের প্রচারণায় গিয়ে লিফলেট বিতরণের সময় সাধারণ জনতার সামনে এই কথা বলেছেন। তার দাবি, "আমি তো খারাপ কিছু বলিনি। তবে পুরো বক্তব্যটি প্রচার না করে কেটে প্রচার করা হয়েছে।"

তবে তার এই সাফাই উখিয়ার রাজনৈতিক উত্তেজনা কমাতে পারেনি। মূলত, তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার এই রাজনীতিতে তিন প্রধান দলকে ‘ভাই ভাই’ আখ্যা দেওয়াটি আদর্শিক অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দেয় কি না, সেই প্রশ্নই এখন কক্সবাজারের রাজনৈতিক মহলে প্রধান আলোচ্য বিষয়। এই ঘটনার রেশ আগামী নির্বাচনে স্থানীয় বিএনপির ভোট এবং দলীয় ঐক্যে কী প্রভাব ফেলে, সেটাই দেখার বিষয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ