চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: চাকসু নির্বাচনের আদ্যোপান্ত



মুহাম্মাদ রিয়াদ উদ্দিন

কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম, যা তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান, সামাজিক সংযোগ বৃদ্ধি এবং সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমের সুযোগ সৃষ্টি করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, যা সংক্ষেপে চাকসু নামে পরিচিত। সম্প্রতি (২৮ আগস্ট) চাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১২ অক্টোবর চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।


লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:

এটি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে এবং ক্যাম্পাসের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি, মতামত, ভাবনা ও পরিকল্পনাকে একীভূত করে, শিক্ষার্থীদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি একাডেমিক এবং সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কার্যকর সংযোগ স্থাপন করে, ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে এবং শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা, প্রশাসনের সঙ্গে পারস্পরিক যোগাযোগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজসেবামূলক ও সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করে। একটি কার্যকর ছাত্র সংসদ বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও প্রাণবন্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শিক্ষার্থীবান্ধব করে তোলে এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার, ন্যায্যতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।


ইতিহাস: 

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম চাকসু নির্বাচন। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর ৫৯ বছরে মাত্র ৬ বার চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ  ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয় চাকসু নির্বাচন।



এবারের (সপ্তম) চাকসু নির্বাচন:

এবার সপ্তম চাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন। তিনি বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অডিটোরিয়ামে চাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪ টি বিভাগে,  ১৪ টি হল ও ১ টি হোস্টেলে প্রাথমিকভাবে মোট ২৫,৭৫২ জন শিক্ষার্থী ভোটার তালিকায় রয়েছে। নির্বাচনের জন্য ১৪ টি কেন্দ্র করা হবে। 


তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বিতরণ করা শুরু হবে ১৪ সেপ্টেম্বর। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে মনোনয়ন জমা নেওয়া শুরু হবে। ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র নেওয়া যাবে। এই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শুরু হবে ১৮ সেপ্টেম্বর। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে। এটি প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে ২৫ সেপ্টেম্বর। ১২ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হবে। এরপরই ভোট গণনা শুরু হবে।


চাকসুর পদসংখ্যা:

চাকসুর কার্যনির্বাহী কমিটিতে সর্বমোট ২৮টি পদ রয়েছে। যেমন:  ১. সভাপতি, ২. কোষাধ্যক্ষ, ৩. সহ-সভাপতি, ৪. সাধারণ সম্পাদক, ৫. যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, ৬. খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক, ৭. সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক, ৮. সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক, ৯. সহ-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক, ১০. দপ্তর সম্পাদক, ১১. সহ-দপ্তর সম্পাদক, ১২. সমাজসেবা, পরিবেশ ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক, ১৩. সহ-সমাজসেবা, পরিবেশ ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক, ১৪. গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সম্পাদক, ১৫. সহ-গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সম্পাদক, ১৬. বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, ১৭. সহ-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, ১৮. ছাত্রী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক (নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত), ১৯. সহ-ছাত্রী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক (নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত), ২০. স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক, ২১. সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক, ২২. যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক, ২৩. সহ-যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক, ২৪. নির্বাহী সদস্য- ৫ (পাঁচ) জন।


সায়াহ্ন:

চাকসুর কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচিত সদস্যদের মেয়াদকাল হবে শপথ গ্রহণের পর থেকে ১ (এক) বছর। মেয়াদান্তে উক্ত কার্যনির্বাহী কমিটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হবে। দীর্ঘদিন পর চাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আশা করি তাদের নায্য অধিকার ফিরে পাবে, চাকসু  হয়ে উঠবে ইনসাফ ও উন্নয়নের সুউচ্চ সিঁড়ি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ