ছুটির দিনে বিতর্কিত শিক্ষকের বোর্ড বসানোয় ক্ষোভ; 'স্বৈরাচারের পাহারাদার' স্লোগানে উত্তাল প্রশাসনিক ভবন, তদন্তের দাবি
চবি প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে, যেখানে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ও বিতর্কিত শিক্ষক সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. কুশল বরণ চক্রবর্ত্তীর পদোন্নতি বোর্ডকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। ছুটির দিনে তড়িঘড়ি করে বোর্ড বসানোর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে আন্দোলন শুরু করলে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যদ্বয়সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তীব্র আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত পদোন্নতি বোর্ড প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শুক্রবার (৪ জুলাই) দুপুর আড়াইটা থেকে শিক্ষার্থীরা এই বিতর্কিত বোর্ডের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে আন্দোলন শুরু করেন। একপর্যায়ে দুপুর সাড়ে তিনটা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা তারা প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও করে রাখেন। শিক্ষার্থীদের স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস: 'বাহ ভিসি চমৎকার, স্বৈরাচারের পাহারাদার'; 'একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর'। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।
বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলন এবং ড. কুশল বরণ চক্রবর্ত্তীর বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত কিছু সংবেদনশীল খবরের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পদোন্নতি বোর্ড প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সাময়িকভাবে শান্ত হন।
আন্দোলন শেষে শাখা ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক ইসহাক ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, "হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি কুশল বরণ চক্রবর্ত্তীর পদোন্নতির জন্য আজ বোর্ড বসানো হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং ফলস্বরূপ তার বোর্ড প্রত্যাহার করা হয়েছে।" তিনি কুশল বরণ, রন্টু দাসসহ যারা 'ফ্যাসিবাদের দোসর' ছিল, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার দাবি জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম পদোন্নতি বোর্ড প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, "সংবাদপত্রে কুশল বরণ চক্রবর্ত্তীর বিষয়ে কিছু সংবেদনশীল খবর প্রকাশিত হওয়ায় বোর্ড প্রত্যাহার করা হয়েছে।" উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, "আমরা জানতে পেরেছি যে, তিনি একটি খুনের মামলার আসামি হিসেবে অভিযুক্ত। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের অফিস ঘেরাও করার পর সিদ্ধান্ত নিয়ে তার বোর্ড প্রত্যাহার করা হয়েছে।" তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার মন্তব্য করেন, "বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাউকে কোর্টের মতো বিচার করতে পারে না। আমরা কারো জেল জরিমানা করতে পারি না। এটা আমাদের এখতিয়ারে নেই। তবে আমরা যে কমিটিগুলো করেছি সেগুলো ধীরে কাজ করছে।"
উল্লেখ্য, ড. কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী গত বছর ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে হেফাজতে ইসলামের কর্মী এনামুল হক চৌধুরীর ওপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার ২০তম আসামি। ওই হামলায় এনামুল হক চৌধুরী কিরিচের কোপে মাথায় গুরুতর জখম হন এবং তার ডান হাত ভেঙে যায়। এ ঘটনায় বাদী হয়ে তিনি গত ৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিকের আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণকে প্রধান আসামি করে ১৬৪ জনের নামে মামলার আবেদন করেন। এমন একটি গুরুতর মামলার আসামির পদোন্নতি বোর্ড বসানো নিয়ে চবি ক্যাম্পাসে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ