২১০ দিনে পানিতে ডুবে ৬০ জনের প্রাণহানি



কক্সবাজারে ৭ মাসে পানিতে ডুবে ৬০ জনের প্রাণহানি

এরফান হোছাইন, কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ

চলতি বছরের গত সাত মাসে কক্সবাজার জেলায় পানিতে ডুবে অন্তত ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে গোসলে নেমে প্রাণ হারিয়েছেন ১২ জন, আর জেলার অন্যান্য স্থানে ৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে। কুতুবদিয়া, উখিয়া ও রামু উপজেলায় মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

এই উদ্বেগজনক তথ্য জানিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি), যারা পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে কাজ করে।


আজ শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে বিশ্বে পানিতে ডুবা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে একটি সচেতনতামূলক র‍্যালী বের করে সিআইপিআরবি’র সি সেইফ প্রজেক্ট। র‍্যালী শেষে সি সেইফ প্রজেক্টের মাঠ কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত তাদের লাইফগার্ড দল ৬৪ জনের মৃত্যু নথিভুক্ত করেছে এবং ৭৯৫ জনকে পানি থেকে জীবিত উদ্ধার করেছে।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী পানিতে ডুবে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "তাদের মধ্যে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হলেও এখনও ১৮ দিন পেরিয়ে গেলেও অরিত্র হাসানের মরদেহ উদ্ধার করা যায়নি।"



ইমতিয়াজ আহমেদ আরও জানান, "বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এর মধ্যে বাংলাদেশে বছরে ১৯ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। গড় হিসাব করলে প্রতিদিন প্রায় ৫০ জন মানুষের মৃত্যু হয়, যাদের মধ্যে ৪০ জনই শিশু।" তিনি এই ঘটনাকে একটি "নীরব মহামারী" হিসেবে উল্লেখ করেন।

জাতিসংঘ ২০২১ সালে ২৫ জুলাইকে বিশ্বে পানিতে ডুবা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইমতিয়াজ আহমেদ সকলের প্রতি এই দিবসকে উপলক্ষ করে সচেতন ও সতর্ক হয়ে নিজেদের নিরাপদ রাখার আহ্বান জানান।


ইমতিয়াজ আহমেদ সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের লাইফগার্ডের পরামর্শ মেনে চলার এবং বিভিন্ন এলাকায় সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, পানিতে ডুবে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু প্রতিরোধে সকলকে সতর্ক হওয়া জরুরি এবং এই নীরব মহামারী প্রতিরোধে সরকারি ও বেসরকারি উভয় উদ্যোগই গ্রহণ করা হোক।
তবে দুঃখজনকভাবে, কক্সবাজারে পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে সরকারি উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়নি।

এ বিষয়ে সমাজকর্মী কলিম উল্লাহ বলেন, "সরকারের উচিত বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগে সৈকতে লাইফগার্ড সেবা চালু করা। এছাড়া কোথায় গোসলে নামা যাবে এবং কোথায় গোসলে নামা যাবে না, সেটিও নির্ধারণ করে দেওয়া প্রয়োজন।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ