শরিফ্যা ডাকাতসহ ২ জন গ্রেফতার, বিপুল অস্ত্র উদ্ধার

 




জালিয়াপালং-এর চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন; র‍্যাবের অভিযানে দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি জব্দ

আরবিএন রিপোর্ট, কক্সবাজার, ২ জুলাই ২০২৫:
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং-এ গত ২৩ জুন সংঘটিত খুনসহ ডাকাতির চাঞ্চল্যকর ঘটনার মূলহোতা আহমদ শরিফ প্রকাশ 'শরিফ্যা ডাকাত' এবং তার অন্যতম সহযোগী রেজাউল করিম প্রকাশ 'বাবুল'কে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-১৫। তাদের কাছ থেকে ৪টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, তাজা ও খালি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। এই গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হলো।
আজ বুধবার (২ জুলাই) র‍্যাব-১৫ কর্তৃক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। র‍্যাব-১৫ এর সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া অফিসার) সহকারী পুলিশ সুপার আ. ম. ফারুক এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
যেভাবে ঘটেছিল হত্যাকাণ্ড ও ডাকাতি
র‍্যাব জানায়, গত ২৩ জুন রাতে উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের নিদানিয়ায় মৃত নুরুল আমিন ও হাসান আলীদের বাড়িতে একটি সশস্ত্র সংঘবদ্ধ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। কুখ্যাত ডাকাত আহমদ শরিফের নেতৃত্বে ৭/৮ জন অজ্ঞাতনামা ডাকাত মুখে মাস্ক পরে অবৈধ বন্দুক, ধারালো দা, চাকু ও শাবল নিয়ে রাত ৮টার দিকে জোরপূর্বক বাড়িতে প্রবেশ করে।
ডাকাতরা ঘরের মহিলা ও অন্যান্য সদস্যদের হাত-পা বেঁধে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৯৫ হাজার টাকা, ৩ জোড়া কানের দুল, ২টি নাকফুল ও ১টি স্মার্ট ফোন লুট করে। লুন্ঠিত মালামাল নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ভিকটিম নুরুল আমিন ও তার ভাই হাছান আলী ডাকাতদের মুখোমুখি হন। এ সময় ডাকাতরা একযোগে তাদের মারধর শুরু করে। পরিবারের সদস্যরা 'ডাকাত ডাকাত' বলে চিৎকার শুরু করলে এবং ভিকটিম নুরুল আমিন ডাকাত শরিফকে চিনতে পারায়, শরিফ নুরুল আমিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে বগলের নিচে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। এতে নুরুল আমিন গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ নুরুল আমিনকে তাৎক্ষণিকভাবে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পূর্বশত্রুতা ও শনাক্তকরণ
র‍্যাব আরও জানায়, ৮-৯ বছর পূর্বে ভিকটিম নুরুল আমিন মালয়েশিয়ায় থাকা অবস্থায় ডাকাত শরিফ ভিকটিমের স্ত্রীকে কু-প্রস্তাবসহ বিভিন্নভাবে প্রায়শই বিরক্ত করত। এ কারণেই ডাকাতির সময় সৌর-বিদ্যুতের স্বল্প আলো এবং ডাকাতদের কথাবার্তায় ভিকটিম নুরুল আমিনের স্ত্রী ও অন্যান্য সাক্ষীগণ ডাকাত শরিফকে শনাক্ত করতে সক্ষম হন। ভিকটিম নুরুল আমিনের স্ত্রী পরবর্তীতে উখিয়া থানায় আহমদ শরিফকে প্রধান আসামি ও অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৩৯৬ ধারায় মামলা দায়ের করেন।

র‍্যাবের অভিযান ও গ্রেফতার
উক্ত চাঞ্চল্যকর ঘটনার সংবাদ প্রাপ্তির পরপরই র‍্যাব-১৫ এর একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং ডাকাতির সাথে জড়িত মূল আসামি ও তার সহযোগীদের সনাক্ত ও গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। আসামিরা নানান সময়ে নিজেদেরকে কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখলেও গতকাল রাতে (১ জুলাই) র‍্যাব-১৫ এর একটি চৌকস দল উখিয়া থানা পুলিশের সহযোগীতায় প্রধান আসামি আহমদ শরিফের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে তাকে ও তার অন্যতম সহযোগী ডাকাত রেজাউল করিমকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের কাছ থেকে মোট ০৪টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ০১ রাউন্ড তাজা এ্যামুনেশন ও ০১ রাউন্ড খালি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের পরিচয়:
১) আহমদ শরিফ প্রকাশ শরিফ্যা ডাকাত (এজাহারনামীয় ০১নং আসামী), পিতা-ওমর মিয়া, মাতা-রাশেদা খাতুন, সাং-পুর্ব নুরার ডেইল, ইউনিয়ন-জালিয়াপালং, থানা-উখিয়া, জেলা-কক্সবাজার।
২) রেজাউল করিম প্রকাশ বাবুল, পিতা-ছৈয়দ আলম, মাতা-মমতাজা বেগম, সাং-পশ্চিম রত্না, ইউনিয়ন-রত্নাপালং, থানা-উখিয়া, জেলা-কক্সবাজার।
র‍্যাব জানিয়েছে, উক্ত খুনসহ ডাকাতির ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ডাকাতদেরকে গ্রেফতার ও লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধারে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মাদককারবারী, অস্ত্র সন্ত্রাসী, অপহরণকারী কিংবা ডাকাতদল যেই হোক, অপরাধীদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ ব্যাপারে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সহযোগিতা একান্ত কাম্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ