কক্সবাজারে গণমিছিলে 'হিটস্ট্রোকে' বিএনপি নেতার মৃত্যু, আরেক যুবদল হাসপাতালে ভর্তি

 

কক্সবাজারে গণমিছিলে 'হিটস্ট্রোকে' বিএনপি নেতার মৃত্যু: শোকস্তব্ধ রাজনৈতিক অঙ্গন, তীব্র গরমে অসুস্থ আরও এক নেতা

প্রবীণ রাজনীতিবিদ সৈয়দ নূরের আকস্মিক প্রয়াণ; জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আবহাওয়ার প্রভাব নিয়ে নতুন বিতর্ক

কক্সবাজার, ২০ জুলাই ২০২৫: 

এরফান হোছাইন, কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ 

কক্সবাজারে জেলা বিএনপির গণমিছিল ও পথসভায় অংশ নিয়ে তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে স্ট্রোক করে মারা গেছেন কক্সবাজার সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ নূর (৬৫)। রবিবার (২০ জুলাই) বিকেলে এই মর্মান্তিক ঘটনা জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আবহাওয়ার প্রভাব নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ সৈয়দ নূর এদিন বিকেলে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত গণমিছিল ও পথসভায় নিজের সহযোদ্ধাদের নিয়ে অংশ নেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জীবনের শেষ এই কর্মসূচিতে তিনি বক্তব্যও রাখেন। এরপর গণমিছিলে ব্যানার হাতে সম্মুখ সারীতে থাকা অবস্থায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে লুটিয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে নেতাকর্মীরা তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকরা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানালেও, উপস্থিত নেতাকর্মীরা এবং স্থানীয়দের অনেকেই তীব্র গরমের কারণে 'হিটস্ট্রোক'কেই এর মূল কারণ বলে ধারণা করছেন।

সৈয়দ নূরের আকস্মিক মৃত্যুর খবরে হাসপাতালে উপস্থিত বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়, তৈরি হয় এক শোকাবহ পরিবেশ। বিএনপির মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফর রহমান কাজল টিটিএনকে বলেন, "তাঁর মৃত্যুতে বিএনপির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। তিনি ছিলেন দলের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী।"

একই মিছিলে অংশ নেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কক্সবাজার শহর যুবদলের যুগ্মসম্পাদক জয়নাল আবেদিন, যিনি বর্তমানে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যুবদল নেতা খোরশেদ আলম জানান, পূর্বনির্ধারিত জেলা বিএনপির গণমিছিলের কর্মসূচিতেই এই ঘটনা ঘটে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রীষ্মকালে বা তীব্র তাপপ্রবাহের সময় খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘক্ষণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ডিহাইড্রেশন এবং হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে পর্যাপ্ত পানি পান, হালকা পোশাক পরিধান এবং ঘন ঘন বিরতি নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই ঘটনা রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাস মেনে কর্মসূচি আয়োজনের গুরুত্বকে আবারও সামনে এনেছে।


কক্সবাজার সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ নূরের আকস্মিক প্রয়াণে গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল মাবুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, সৈয়দ নূর ছিলেন দলের দুঃসময়ের একজন নিবেদিতপ্রাণ কান্ডারি, যার শূন্যতা পূরণ করা কঠিন।

আব্দুল মাবুদ চৌধুরী আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, "সৈয়দ নূর ভাই দীর্ঘদিন ধরে আমার সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। তিনি ছিলেন বিএনপির দুঃসময়ের একজন কান্ডারি, যার বিকল্প তিনি নিজেই।" তিনি আরও যোগ করেন, "বর্তমানে একজন নিবেদিত ও পরিচ্ছন্ন বিএনপি নেতা খুঁজে পাওয়া কঠিন, কিন্তু সৈয়দ নূর ছিলেন সেই পরিচ্ছন্ন নেতার এক জ্বলন্ত প্রমাণ।" তার আকস্মিক বিদায়কে 'কঠিন দুঃসংবাদ' হিসেবে উল্লেখ করে আব্দুল মাবুদ চৌধুরী জানান, সৈয়দ নূর মৃত্যুকালে দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে গেছেন। তার এক ছেলের জন্য বিয়ের কথাবার্তাও চলছিল, কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই তিনি চলে গেলেন। সৈয়দ নূরের এই অকাল প্রয়াণ কক্সবাজারের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সৈয়দ নূরের মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি পিএমখালীতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সেখানেই তার শেষ বিদায় অনুষ্ঠিত হবে। এই আকস্মিক প্রয়াণ কক্সবাজারের রাজনৈতিক মহলে এক অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি করেছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ