৫ আগস্টের ফেসবুক পোস্টের মাশুল: কক্সবাজারের সাবেক এডিএমসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে ক্ষমতা অপব্যবহারের মামলা, তদন্তে সিআইডি
২০১৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফেসবুক পোস্টের অভিযোগে ছাত্রদল নেতাকে আটক, শারীরিক নির্যাতন ও মিথ্যা মামলায় ফাসানোর অভিযোগ; কোটি টাকা মানহানির দাবি
ডেস্ক রিপোর্ট : ক্ষমতার অপব্যবহার এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে মাগুরার সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন যিনি একসময় মাগুরা সদর ইউএনও ছিলেন এবং পরবর্তীতে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন, সেই আবু সুফিয়ান। ভুক্তভোগী এক ছাত্রদল নেতার অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত এই মামলাটি গ্রহণ করে তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) মাগুরা সদর আমলী আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলাম এই যুগান্তকারী আদেশ দেন। এর একদিন আগে, সোমবার, মাগুরা সদর আমলী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল রুমন, যিনি মাগুরা শহরের ভায়না গ্রামের মৃত ইন্তাজ শিকদারের ছেলে।
যে অভিযোগে মামলা
মামলার বাদী ফয়সাল রুমনের অভিযোগ, ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট এবং ১৩ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটাক্ষ করে তিনি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কিছু ছবি পোস্ট করেছিলেন। এই পোস্টের জের ধরে ওই বছরের ১৮ আগস্ট তৎকালীন মাগুরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
এরপর শুরু হয় ফয়সাল রুমনের ওপর নির্যাতনের বিভীষিকা। বাদীর অভিযোগ, পুলিশ তাকে আটকের পর নির্মমভাবে শারীরিক নির্যাতন চালায়, যার ফলশ্রুতিতে তার স্পাইনাল কর্ড এবং মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায়। নির্যাতনের পরদিন ফয়সাল রুমনের নামে মাগুরা সদর থানায় একটি মিথ্যা ও সাজানো মামলা দায়ের করা হয়। ওই মিথ্যা মামলার আসামি হিসেবে তাকে দীর্ঘ ১৬৮ দিন বিনাবিচারে কারাবন্দি থাকতে হয়।
বড় মূল্য দিতে হয়েছে ভুক্তভোগীকে
ফয়সাল রুমন তার অভিযোগে আরও উল্লেখ করেছেন, এই মিথ্যা মামলা এবং দীর্ঘ কারাবাসের কারণে তিনি সরকারি চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এছাড়া তার ৫০ কোটি টাকার মানহানি হয়েছে বলেও তিনি মামলায় দাবি করেছেন। বাদীর আইনজীবী কাজী মিনহাজ উদ্দিন বলেছেন, "ফেসবুকে লেখার কারণে রুমনের ওপর তৎকালীন প্রশাসন যে নির্যাতন চালিয়েছিল, তা ক্ষমতার চরম অপব্যবহার ছাড়া আর কিছু নয়।"
অভিযুক্তদের তালিকায় যারা
এই মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে তৎকালীন মাগুরা সদর ইউএনও আবু সুফিয়ানকে। এছাড়াও মামলার অন্য অভিযুক্তরা হলেন:
মাগুরার তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) খান মো. রেজোয়ান
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম
এসআই আল এমরান
এসআই বিশ্বজিত
কনস্টেবল পার্থ রায়
মাগুরা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ফজলুর রহমান
জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি মীর মেহেদী হাসান রুবেল
এবং মুরাদুজ্জামান মুরাদ নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যখন মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হয়, তখন এমন অভিযোগ নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। আদালতের নির্দেশে সিআইডি'র এই তদন্ত ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবে এবং নির্যাতিত মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথ সুগম করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
0 মন্তব্যসমূহ