চবিতে ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ

 


চবিতে ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ: প্রকৌশল দপ্তরের কর্মচারী ও গাছ উদ্ধারে টাকা দাবির তোলপাড়

'জুলাই পদযাত্রা'র পর নতুন বিতর্ক; সাবেক অর্থ সম্পাদক হাসানের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট করে অপকর্মের অভিযোগ, দল বলছে সাংগঠনিক ব্যবস্থা

চট্টগ্রাম অফিস ডেস্কঃ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রদলের সাবেক এক নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, যা ক্যাম্পাসে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কখনো টাকা উদ্ধার, আবার কখনো অবৈধভাবে গাছ ছাড়িয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে টাকা দাবির মতো নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে চবি শাখা ছাত্রদলের সাবেক অর্থ সম্পাদক হাসান আহমেদের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগগুলো দলের অভ্যন্তরেও ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করেছে এবং তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে ছাত্রদল নেতৃত্ব।

জানা গেছে, অভিযুক্ত হাসান আহমেদ চবির অর্থনীতি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও তার আসন রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলে, যা নিয়ম বহির্ভূত বলে অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র অভিযোগ করে বলেন, গত ২৬ জুন (বৃহস্পতিবার) দুপুরের দিকে হাসান ও তার কয়েকজন কর্মী মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের কর্মরত একজন কর্মচারীকে তুলে এনে বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে যায়। সেখানে তারা ওই কর্মচারীর কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং টাকা না দিলে চাকুরি করতে দেওয়া হবে না বলেও হুমকি দেয়। এমনকি এসব কথা বাইরে প্রকাশ না করারও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, প্রকৌশল দপ্তরের ওই কর্মচারী স্থানীয় 'হানিফ-হাসান' গ্যাংয়ের সদস্য। অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগ আমলে তারা নিজেদের ক্ষমতা ব্যবহার করে নানা অপকর্ম চালাতো। স্থানীয় একটি জায়গা নিয়ে বিরোধের জেরে বিএনপির এক কর্মীকে ওই কর্মচারী মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করে আসছিলেন। বিষয়টি জানার পর হাসান দুই মাস ধরে পর্যবেক্ষণ করে ওই কর্মচারীকে তুলে আনেন এবং এসব বিষয়ে জড়িয়ে তার কাছে ১ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়।

এর আগে গত ১৮ জুন ভারি বর্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের গিরিপথগুলো পানিতে পূর্ণ হয়ে স্রোত বেড়ে গেলে কাটা গাছের অনেকগুলো গুঁড়ি ভেসে আসতে দেখা যায়। অনেকগুলো গাছ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লুইসগেইটে ভেসে আসতে দেখে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি প্রশাসনকে জানায় এবং প্রশাসন এসব গাছ জব্দ করে। তবে জব্দকৃত এসব গাছ ছাড়িয়ে অথবা গাছ উদ্ধার করে দেওয়ার জন্য ২০ হাজার টাকা দাবি করেন ছাত্রদলের সাবেক এই নেতা। এ বিষয়ে মোহাম্মদ আলী নামের এক গাছ ব্যবসায়ী বলেন, "আমরা মালিকানা গাছ কেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের গিরিপথ দিয়ে পার করছিলাম। গিরিপথ দিয়ে গাছ পার করাটা অবৈধ এটা আমি জানতাম না। গাছ বের করার সময় আমি সেখানে ছিলাম না। কিছু ছেলেরা গিয়ে গাছগুলো আটকায়। আমার কর্মচারীরা ফোন দিয়ে বলে, কিছু ছেলে গাছ আটকাইছে, তারা ২০ হাজার টাকা চাইছে। টাকা দিলে তারা গাছগুলো ছেড়ে দিবে বলেছে। আমি ওখানে যেতে যেতে বিভিন্ন গ্রুপের ১৫ থেকে ২০ জন চলে আসে।"

এই অভিযোগের বিষয়ে চবি ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মামুন উর রশিদ মামুন বলেন, "সম্প্রতি তার (হাসান আহমেদ) বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির একটি ঘটনা শুনেছি। যদি দলের ইমেজ খারাপ হয় এমন কাজ কেউ করেছে প্রমাণিত হলে অবশ্যই দল তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবে।" চবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, "আমি শুনেছি, হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের এক কর্মচারীকে তুলে নিয়ে চাঁদা দাবি করেছে। ওই সময় আমি কমিটির কাজে ঢাকায় ছিলাম। বিষয়টি জানার পরই হাসানকে বেশ কয়েকবার সতর্ক করা হয়েছে এবং ক্যাম্পাসে তার রাজনৈতিক অভিভাবককে অবগত করেছি। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, নতুন বাংলাদেশে ছাত্রদলের নাম ব্যবহার করে কেউ যদি চাঁদাবাজির চেষ্টা করে, তার কোনো সুযোগ নেই।" ছাত্রদলের চবি শাখা সভাপতি আলাউদ্দীন মহসিন বলেন, "ওই সময় আমি ঢাকায় অবস্থান করছিলাম। চাঁদাবাজির বিষয়টি শোনার পরেই আমি (উপ-উপাচার্য) অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন স্যারের সাথে এবং আমাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলেছি। পরে অভিযুক্ত এবং সে যে গ্রুপ মেইনটেইন করে তাদের সতর্ক করেছি। যতটুকু জানি, বিষয়তা মীমাংসা হয়ে যাওয়ার কথা।"

তবে চাঁদাবাজির বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত হাসান আহমেদ। তিনি বলেন, "আসলে পারিবারিক জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ফরহাদের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম। পরে তারা নিজেরা বিষয়টি পারিবারিকভাবে মীমাংসা করে নিবে বলায় আমরা চলে এসেছি। টাকা চাওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।" এই অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।


সুত্র: ডেইলি ক্যাম্পাস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ