র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ-মুক্তিপণ: সেই রোহিঙ্গা যুবক র‍্যাবের হাতে আটক

 


র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ-মুক্তিপণ: মূল হোতা ইউনিফর্ম-অস্ত্রসহ গ্রেফতার, চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস

রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে যুবককে অপহরণে ব্যবহৃত ৪টি ভুয়া র‌্যাব ইউনিফর্ম, আইডি কার্ড, পিস্তল-এলজিসহ বিপুল গোলাবারুদ উদ্ধার; টেইলার্সদের প্রতি র‌্যাবের কঠোর সতর্কতা

আরবিএন নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজারের উখিয়া থাইংখালী উত্তর হাজিরপাড়া এলাকায় র‌্যাব পরিচয়ে চাঞ্চল্যকর অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনার অন্যতম হোতাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৫। গ্রেফতারকৃতের কাছ থেকে র‌্যাবের ইউনিফর্ম, ভুয়া আইডি কার্ড, দেশি-বিদেশি অস্ত্র, গুলি ও হ্যান্ডকাফ উদ্ধার করা হয়েছে। এই গ্রেফতারের মাধ্যমে অপহরণ চক্রের একটি নতুন modus operandi (অপরাধ পদ্ধতি) উন্মোচিত হয়েছে, যেখানে বরখাস্তকৃত এক সেনা সদস্য তার পূর্বের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভুয়া র‌্যাব ইউনিফর্ম তৈরি করে অপরাধ সংঘটিত করত।

র‌্যাব-১৫ এর সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া অফিসার) সহকারী পুলিশ সুপার আ. ম. ফারুক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

যেভাবে অপহরণ ও উদ্ধার অভিযান

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১১ জুন (বুধবার) রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৫’তে বসবাসরত মো. রহিমুল্লাহর ছেলে মো. হাফিজ উল্লাহকে অপহরণ করা হয়। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন ও এনায়েত উল্লাহর যোগসাজশে বরখাস্তকৃত সৈনিক সুমন, সন্ত্রাসী ফারুক এবং সন্ত্রাসী শিকদার—এই তিন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী র‌্যাব পরিচয়ে হাফিজ উল্লাহকে তার নিজ বসতঘর থেকে ডেকে রঙ্গিখালী গহীন পাহাড়ে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে অপহরণকারীরা ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

অপহরণের খবর পাওয়ার পরপরই র‌্যাব-১৫ এর একটি চৌকস দল ১৩ জুন (শুক্রবার) রঙ্গিখালীতে অভিযান চালিয়ে আফ্রিদি ও আব্দুল গফুর নামে দু’জন সন্দেহভাজনকে আটক করে। গোয়েন্দা কার্যক্রম আরও জোরদার করে ১৪ জুন (শনিবার) মরিচা বাজার থেকে মূল অপহরণকারী বরখাস্তকৃত সৈনিক মো. সুমন মুন্সিকে আটক করা হয়। সুমন মুন্সির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৫ জুন (রবিবার) র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ, এপিবিএন ও বনবিভাগের আড়াই শতাধিক জনবল নিয়ে গহীন অরণ্যে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। অপহরণের ৭২ ঘণ্টা পর ভিকটিম হাফিজ উল্লাহকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় অভিযানকারীরা এবং ঘটনাস্থল থেকে ০১টি দেশীয় অস্ত্র, ০৩ রাউন্ড এ্যামুনেশনসহ র‌্যাবের ইউনিফর্ম ও ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়।

মূল হোতার গ্রেফতার ও অস্ত্রের ভাণ্ডার উন্মোচন

আটককৃত সন্ত্রাসীদের তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব তাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম আরও বেগবান করে। এর ফলশ্রুতিতে গত ২৭ জুন (শুক্রবার) হাফিজুল্লাহ অপহরণের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত কুখ্যাত ডাকাত শিকদারকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। শিকদারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল (রবিবার, ২৯ জুন) উখিয়ার মরিচ্যা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে সন্ত্রাসী ফারুককে আটক করে র‌্যাব।

ফারুকের কাছ থেকে অপহরণে ব্যবহৃত ৪টি র‌্যাবের ইউনিফর্ম, ১টি র‌্যাবের ভুয়া আইডি কার্ড, ১টি হ্যান্ডকাফ, ১টি বিদেশী পিস্তল, ২ টি দেশী আগ্নেয়াস্ত্র, ১০ রাউন্ড তাজা এ্যমুনেশন, ১১ রাউন্ড এমটি কার্টিজ ও ১টি চাকু উদ্ধার করা হয়।

সেনা অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভুয়া ইউনিফর্ম তৈরি

জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব জানতে পারে যে, বরখাস্তকৃত সৈনিক সুমন তার র‌্যাবে চাকুরীর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কয়েক বছর আগে মিরপুরের শাহ আলী মার্কেট থেকে এসব র‌্যাবের ইউনিফর্ম তৈরি করেছে। প্রতিটি ইউনিফর্ম প্রস্তুত করতে তার ২৫০-৫০০ টাকা ব্যয় হয়েছে। সন্ত্রাসীরা এই ইউনিফর্মগুলো ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে র‌্যাবের পরিচয়ে অপহরণ করে আসছিল।

টেইলার্সদের প্রতি কঠোর সতর্কতা

র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত পোশাক ব্যক্তিগতভাবে তৈরি এবং ব্যবহার করা গুরুতর অপরাধ। র‌্যাব সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে দেশের সকল টেইলার্স ও পোশাক প্রস্তুতকারী কোম্পানীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছে যে, এ ধরণের অপরাধ থেকে তাদেরকে বিরত থাকতে হবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পলাতক সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত

গ্রেফতারকৃত আসামীর বিস্তারিত পরিচয় হলো: মো. জায়েদ হোসেন ফারুক (২২), পিতা-আ. শুক্কুর, মাতা-ছমুদা খাতুন, গ্রাম-পশ্চিম মরিচ্যা ১নং ওয়ার্ড, ইউপি-হলুদিয়া পালং, থানা-উখিয়া, জেলা-কক্সবাজার।

র‌্যাব জানিয়েছে, হাফিজুল্লাহ অপহরণের সাথে সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ সন্ত্রাসীকে আটক করা সম্ভব হলেও এখনও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন ও কুখ্যাত ডাকাত শাহআলমসহ কয়েকজন ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। বর্ণিত পলাতক সন্ত্রাসীদের ধরতে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। দেশের অপরাধ নির্মূলে র‌্যাব-১৫ এর নিরলস কাজ অব্যাহত থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ