মহেশখালীবাসীর স্বপ্ন পূরণের পথে; জেটির কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি

 মহেশখালীতে নির্মাণ হচ্ছে পর্যটকবান্ধব আধুনিক জেটি

//সী-ট্রাক এর পরে মহেশখালীবাসীর আরও একটি  স্বপ্ন পূরণের পথে

//জোয়ার-ভাটাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে স্থানীয় সহ দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা

//জেটির কাজ দ্রুত শেষ করতে সচেতন মহলের দাবি


আরবিএন নিজস্ব প্রতিবেদন:

কক্সবাজারের অন্যতম দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে নির্মিত হচ্ছে পর্যটকবান্ধব আধুনিক জেটি ও জেটিঘাট। দুই লেনের এই জেটির নির্মাণকাজ ইতোমধ্যেই ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এটি নির্মিত হলে দ্বীপের সাড়ে ৪ লাখ মানুষের পাশাপাশি এখানে আসা পর্যটকদের যাতায়াত নিরাপদ ও সহজ হবে।



স্থানীয় সূত্র ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মহেশখালীর লোকসংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লাখ। কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথে দ্বীপবাসী ও পর্যটক যাতায়াত দিন দিন বাড়লেও নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি এখনো।


দ্বীপটির সঙ্গে কক্সবাজার জেলা শহরের যোগাযোগের একমাত্র পথ হলো ৮ কিলোমিটারের কক্সবাজার-মহেশখালী ‘সাগর চ্যানেল’। প্রতিদিন ১৭০টি নৌযানে অন্তত ২০ হাজার মানুষ এই চ্যানেল ব্যবহার করেন। কিন্তু মহেশখালীর গোরকঘাটা এলাকায় স্থায়ী জেটি ও জেটিঘাট না থাকায় দ্বীপটিতে যাতায়াতে লোকজনকে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। বর্ষাকাল ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল থাকলে এই নৌপথে যাতায়াতে মানুষের ভোগান্তি আর দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়। এছাড়াও অসুস্থ রোগী নিয়ে ও জরুরি পরিস্থিতিতে এই পানিপথে যাতায়াত হয়ে ওঠে সবচেয়ে দুর্ভোগের।




স্থানীয়রা মনে করছেন, এমন সব দুর্দশা থেকে পরিত্রাণ দিতে পারবে নির্মাণাধীন নতুন জেটি। পর্যটকবান্ধব এই জেটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে মহেশখালী দ্বীপে মানুষের যাতায়াত সুবিধা বাড়বে। সম্প্রসারিত ও সমৃদ্ধ হবে পর্যটনশিল্প।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুটে গোরকঘাটা ঘাটে পুরাতন জেটিটি জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ায় পর্যটক ও যাত্রীদের সুবিধার্থে আরেকটি নতুন জেটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ৩৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন জেটিটির দৈর্ঘ্য ৭০০ মিটার ও প্রস্থ ৭ দশমিক ৩ মিটার। ৭০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জেটির মধ্যে ৩০০ মিটার সংযোগ সড়কও নির্মাণ করা হবে। এই নির্মাণকাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।




এলজিইডি সূত্র জানায়, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে মহেশখালীর গোরকঘাটা ঘাটে আধুনিক মানের একটি জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এই জেটিতে থাকবে দুই লাইনের যান চলাচল সড়ক, বিশ্রামাগার, প্রার্থনা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা জায়গা এবং টয়লেটসহ বিনোদনেরও ব্যবস্থা।

কক্সবাজার স্পিডবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। প্রতিদিন অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ এই জেটি দিয়ে যাতায়াত করেন। এদের মধ্যে গড়ে পাঁচ শতাধিক পর্যটক থাকেন।’

তিনি বলেন, ‘জেটি এলাকা ভরাট হয়ে যাওয়ায় যাত্রীরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন। নির্মাণাধীন জেটির কাজ শেষ হলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কেটে যাবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।




ঢাকা থেকে  আগত জেরিন সুলতানা নামে এক নারী পর্যটক জানান, কিংবদন্তী দ্বীপ কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ৮-৯ কিলোমিটারের মধ্যে । তবে কক্সবাজার থেকে মহেশখালীর ঘাটে পৌঁছালে সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয় । জোয়ার না থাকলে বড় সী-ট্র্যাকের মতো অনেক যানবাহন ভীড়তে পারে না ঘাটে। এছাড়া মেয়াদউর্ত্তীণ জেটি এখন ঝুকিপূর্ণ হয়ে গেছে। তবে নতুন জেটি হলে এই দুর্ভোগ কমে যাবে কারণ দীর্ঘ ও ঠেকসই জেটি একেবারে কয়েকশো ফুট সামনে হওয়ায় ভাটাতেও বোট বা বড় যানবাহন ভীড়তে পারবে এবং নিরাপদে মানুষ যাতায়াত করতে পারবে। এতে পর্যটক সহ স্থানীয়রা উপকৃত হবে এবং মহেশখালীতেঁ অর্থনৈতিক অবদান রাখতে পারবে। 




মহেশখালীর টমটম চালক নাছির উদ্দিন জানান, ‘পুরোনো জেটি দিয়ে ঘাটে যাওয়া যায় না। তাছাড়াও জেটিটি জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। যে কোনো সময় বিধ্বস্ত হতে পারে। নতুন জেটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে সাধারণ মানুষ ও পর্যটকরা গাড়ি নিয়েই জেটিঘাটে পৌঁছে নৌযানে উঠতে পারবেন।’


মহেশখালী উপজেলার বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল আজাদ বলেন,  অত্যাধুনিক একটি জেটি মহেশখালীবাসীর অন্যতম চাওয়া।  এটি হলে ভাটায় অন্তত কাদা - ময়লায় নেমে নৌকা ও স্পীড বোটে উঠতে হবে না। টেকসই উন্নয়ন ও আধুনিক জেটির কাজ সম্পন্ন হলে আশা করি আমরা সী-ট্রাকে নিরাপদে পৌঁছাতে পারবো। 



মহেশখালী পৌরসভার তথ্যমতে, গোরকঘাটার পূর্বপাশে ১৯৯৮ সালে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪০০ মিটার দীর্ঘ একটি জেটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর ২৭ বছরেও ওই জেটির কোনো সংস্কার হয়নি। বর্তমানে জেটির বিভিন্ন অংশে বড় বড় ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। ভেঙে পড়েছে দুই পাশের রেলিং।

সূত্র মতে, ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ছয় বছর ধরে জেটির ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এই কারণে নতুন করে আরেকটি জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে।

কক্সবাজারে কর্মরত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন খান জানান, ‘নতুন জেটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে মহেশখালীর বাসিন্দাদের নৌপথে যাতায়াতের ভোগান্তি আর থাকবে না।’

তিনি বলেন, ‘দ্বীপবাসী ও পর্যটকদের কথা ভেবে সরকার নতুন এই জেটি নির্মাণ করছে। জেটির নির্মাণকাজ ইতোমধ্যেই ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট কাজও যথাসময়ে শেষ হবে বলেই আশা করছেন সরকারি এই কর্মকর্তা।’


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ