মহেশখালীতে নিজের ঘরে আগুন দিয়ে প্রতিপক্ষকে গায়েল করলো চিহ্নিত চক্র।
কক্সবাজার প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলার মহেশখালীর ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের ঠাকুরতলা গ্রামে আদালতে বিচারাধীন একটি জমি দখলের উদ্দেশ্যে বসতঘরে পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগের অভিযোগ ঘিরে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় ভূমিদস্যু কাজল দে ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে জমি দখলের পুরনো অভিযোগ থাকলেও এবার তারা নাটক সাজিয়ে আগুন দিয়ে প্রতিপক্ষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকেলে।
আদালতে বিচারাধীন বিরোধপূর্ণ জমিতে পরিকল্পিতভাবে আগুন ধরিয়ে নিরীহ জমির মালিক ও এক সাংবাদিকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে সাজানো মামলার অভিযোগে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে পুরো এলাকা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, আগুন লাগার সময় ঘরটিতে বাইরে থেকে কেউ প্রবেশ করেনি। এলাকাবাসীর দাবি, এটি ছিল সম্পূর্ণ সাজানো নাটক- যার লক্ষ্য ছিল, আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে জমির বৈধ মালিক মো. সরোয়ার কামাল ও তার পরিবারের সদস্যদের ফাঁসানো।
সরোয়ার কামাল বলেন, আমি জনৈক তপন কান্তি দে ও সাধন চন্দ্র দে মাস্টারের কাছ থেকে বৈধভাবে ৫০ শতক জমি কিনেছি এবং রেকর্ড আমার নামে। দীর্ঘদিন ধরে কাজল দে এই জমি দখলের জন্য নানা কৌশল করে আসছে। যখন আদালতে মামলা করেছি, প্রশাসনকে জানিয়েছি- তখনই তারা আগুন দিয়ে উল্টো আমাদের নামে নাটক সাজিয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কাজল দে গং নিজেরাই ঘরে আগুন লাগিয়ে সরোয়ার ও সাংবাদিক তারেকসহ সাতজনকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে। এক মহিলা ও তার মেয়ে ঘরে ঢুকে আগুন লাগানোর পর নিজেরাই চিৎকার শুরু করে বলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। অথচ ঘরটি প্রধান সড়কের পাশে এবং জনবহুল এলাকায় হওয়ায় আগুন লাগানোর ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবাই তা খেয়াল করেন।
এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে মহেশখালী উপজেলা চত্বরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে অংশ নেন স্থানীয় শত শত মানুষ। বিক্ষুব্ধ জনতা কাজল দে’র বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন- সাংবাদিক তারেককে টার্গেট করেই এই সাজানো মামলা। তিনি অনেকদিন ধরে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে লিখে আসছেন। ওরা চায় তার কণ্ঠ বন্ধ করে দিতে। এই মামলা শুধু সরোয়ারের বিরুদ্ধে না, আমাদের সবার বিরুদ্ধে। আজ একজন সরোয়ারকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসালে কাল আমরা সবাই টার্গেট হব। ভূমিদস্যু কাজল দে ও তার গোষ্ঠী প্রশাসনকে ব্যবহার করে নিরীহ মানুষদের হয়রানি করছে।
এসময় ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং সাংবাদিকসহ নিরপরাধদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং জবরদখল প্রতিরোধে প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকাই এখন এলাকাবাসীর প্রধান দাবি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে মহেশখালীতে কিছু প্রভাবশালী ভূমিদস্যু কুচক্রী মহল জমি দখল, মিথ্যা মামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে এলাকাবাসীর জীবন বিষিয়ে তুলেছে। এ চক্রের বিরুদ্ধে সরব হলেই তাকে হয়রানিমূলক মামলায় ফাঁসানো হয়।
সরোয়ার জানান, তিনি মহেশখালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন এবং প্রশাসনকে বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করেছিলেন। এমনকি, নৌবাহিনীর স্থানীয় কন্টিনজেন্ট ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে দেখেন, জমি দখলের চেষ্টা সত্যি। অথচ তার পরও উল্টো তাকেই আসামি করা হয় আগুন লাগানোর মামলায়।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, এটা ন্যায়ের বিরুদ্ধে নগ্ন ষড়যন্ত্র। জমি দখলের লড়াই এখন আগুনের নাটকে রূপ নিয়েছে। কাজল দে দীর্ঘদিন ধরে সাম্প্রদায়িকতা ও দখলবাজির টেক লাগিয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি জবরদখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। জমির বৈধ মালিক আদালতের শরণাপন্ন হলে, উল্টো তাকে ফাঁসাতে অগ্নিসংযোগের নাটক সাজায় এই ভূমিদস্যু।
0 মন্তব্যসমূহ