মোশাররফের জামিনের পর নতুন মামলায় আবারও গ্রেফতার



হাসপাতালে মোশাররফ, রাজপথে মামলা

নিস্ক্রিয় রাজনীতিবিদ হয়েও গ্রেপ্তার-হয়রানির শিকার, পরিবারের দোয়া কামনা


নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনৈতিক পালাবদলের পর অন্তর্বর্তী সরকার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করলেও বাস্তবতা যেন ভিন্ন চিত্রই তুলে ধরছে। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের বারবার গ্রেপ্তার ও হয়রানির ঘটনায় প্রশ্ন তুলছেন মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা।


সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বর্তমানে ৮৩ বছর বয়সে বার্ধক্য ও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। ২০২৪ সাল থেকে তিনি রাজনীতিতে একপ্রকার নিস্ক্রিয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধ সত্ত্বেও তিনি সর্বশেষ নির্বাচনে অংশ নেননি।


সম্প্রতি বাথরুমে পড়ে গিয়ে একটি পা ভেঙে যায় তাঁর। লাঠিতে ভর দিয়েই চলাফেরা করতে হয় এখন। হৃদযন্ত্রে পাঁচটি রিং বসানো এই প্রবীণ নেতার অবস্থা এমন যে আপনজনকেও ঠিকভাবে চিনতে পারেন না।


পরিবারের দাবি, এমন একজন অসুস্থ ও অক্ষম ব্যক্তির বিরুদ্ধেও চলছে হয়রানিমূলক মামলা ও গ্রেপ্তারের ধারাবাহিকতা। উচ্চ আদালত থেকে ১১টি হত্যা মামলায় জামিন পাওয়ার পর মুক্তির মুহূর্তেই তাঁকে আবারও গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টন থানায় দায়ের হওয়া একটি হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় নতুন করে জড়ানো হয় তাঁকে।


ঢাকা বারের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখী বলেন, “যেখানে সংশ্লিষ্টতা নেই, সেখানেও বারবার গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। এটি ন্যায়বিচারকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং রাষ্ট্রীয় শক্তিকে প্রতিপক্ষ দমনযন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার নজির তৈরি করছে।”


বিশ্লেষকদের মতে, এমন দৃষ্টান্ত শুধু মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন নয়; এটি বিচারব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থার ভিত্তিকেও নড়বড়ে করে দিচ্ছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের শরিক বাংলাদেশ পিপলস পার্টির (বিপিপি) চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারীর ক্ষেত্রেও একই চিত্র। একের পর এক মামলায় জামিন পাওয়ার পরও তাঁকে জেলগেট থেকেই পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়। আট মাস ধরে কারাগারে থাকা বাবুল সরদারের স্ত্রী নাজমা আক্তার বলেন, “ডিবি বলেছিল চিন্তার কিছু নেই, ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু ও এখনো জেলে।”


আইন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আসিফ নজরুল এক সময় বলেছিলেন, “কেউ মামলা করলেই গ্রেপ্তার নয়; নির্দোষ কেউ হয়রানির শিকার হবেন না।” কিন্তু বাস্তবে পুলিশ কর্তৃক আদালতে দেওয়া ফরোয়ার্ডিং রিপোর্টে প্রায় একধরনের ভাষা ব্যবহৃত হয়: “তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে গ্রেপ্তার প্রয়োজন।”


এই "গ্রেপ্তার-জামিন-আবার গ্রেপ্তার" চক্র এখন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মত সংশ্লিষ্টদের। ন্যায়বিচার কেবল রাষ্ট্রের নীতিগত অঙ্গীকার নয়, এটি একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মৌলিক ভিত্তি। আর সেটিই যখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তখন গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকার গভীর সংকটে পড়ে। এমন অবস্থায় পরিবারের পক্ষ থেকে মোশাররফ হোসেনের সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ