৭ মামলায় ১৮ দিনের রিমান্ডে 'বাইট্টা জাফর

 



৭ মামলায় ১৮ দিনের রিমান্ডে 'বাইট্টা জাফর': সাবেক এমপি জাফর আলমকে ঘিরে চকরিয়ার আদালতে টান টান উত্তেজনা

হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে অভিযুক্ত নেতার রিমান্ড মঞ্জুর; আদালত প্রাঙ্গণে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ, নিরাপত্তা বলয়ে ঢাকা

কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম, যিনি 'বাইট্টা জাফর' নামে পরিচিত, তাকে সাতটি আলোচিত মামলায় মোট ১৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বুধবার সকালে চকরিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ারুল কবির তদন্তকারী কর্মকর্তাদের পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন। উচ্চপদস্থ এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের রিমান্ড মঞ্জুরকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশের এলাকায় সকাল থেকেই ছিল টান টান উত্তেজনা; নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেই চলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ।

আট মামলায় রিমান্ডের বিস্তারিত

আদালত সূত্র এবং চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মো. গোলাম সরওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, সাবেক এমপি জাফর আলমের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় পাঁচটি এবং পেকুয়া থানায় দুটি সহ মোট সাতটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে চকরিয়া থানার পাঁচ মামলায় ১৪ দিন এবং পেকুয়া থানার দুটি মামলায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। অভিযোগগুলো মূলত হত্যা এবং বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারায় দায়েরকৃত।

সকাল আটটার দিকে আদালত কার্যক্রম শুরু হলেও, রিমান্ড শুনানির জন্য জাফর আলমকে কাঠগড়ায় তোলা হয় সকাল ৯টা ১০ মিনিটে। প্রায় ২৭ মিনিটের শুনানি শেষে ৯টা ৩৭ মিনিটে তাঁকে কাঠগড়া থেকে নামিয়ে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে চকরিয়া থানার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক আবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তারা মোট ২৪ দিনের রিমান্ড চাইলেও, আদালত ১৮ দিনের রিমান্ডের অনুমোদন দেন।

বৃষ্টি উপেক্ষা করে আদালত প্রাঙ্গণে দুই পক্ষের বিক্ষোভ

সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলমকে আদালতে আনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সকাল সাড়ে নয়টা থেকে চকরিয়া থানা রাস্তার মাথা এলাকায় বিএনপি'র নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। সমাবেশে চকরিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল হক, চকরিয়া পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুদ্দিন ফরায়জী বক্তব্য রাখেন। তাদের সমাবেশ থেকে জাফর আলমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।

অন্যদিকে, জাফর আলমকে 'মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে হয়রানি' করা হচ্ছে দাবি করে এর প্রতিবাদে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মীও একই সময়ে ঝটিকা মিছিল বের করেন। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে চকরিয়া পৌরসভার মগবাজার এলাকায় অনুষ্ঠিত এই মিছিলে নেতৃত্ব দেন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন, খুটাখালী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম এবং চকরিয়া পৌরসভা যুবলীগের কর্মী এনামুল হক।


কড়া নিরাপত্তা বলয়ে নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি

আদালত প্রাঙ্গণে উভয় পক্ষের জমায়েতকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলা এড়াতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন জানান, রিমান্ড শুনানির জন্য জাফর আলমকে আদালতে তোলার সময় সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও পুলিশ বিভিন্ন স্তরে কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলে। সকালের বৃষ্টি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক পদক্ষেপের কারণে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি এবং পুরো ঘটনাটি শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন যে, আদালতের নির্দেশে সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলমকে চকরিয়া থানায় আনা হয়েছে এবং রিমান্ডের নির্ধারিত সময় শেষে তাকে পুনরায় আদালতে হাজির করা হবে। এই উচ্চ প্রোফাইল মামলার পরবর্তী ধাপের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ