রামুতে ইয়াবা লুটের টাকার ভাগাভাগি: তদন্ত কমিটি গঠন, প্রমাণ পেলেই শাস্থির হুশিয়ারি


রামু ছাত্রদল আহ্বায়ক সানাউল্লাহ সেলিম


// দলীয় ভাবমূর্তি সংকটে: ইয়াবা লুটের ঘটনায় বিএনপির তদন্ত কমিটি
//রামু ছাত্রদল আহ্বায়কের নেতৃত্বে ৩০ হাজার ইয়াবা লুট ও ২৮ লাখ টাকা বন্টনের অভিযোগ

এরফান হোছাইনঃ
কক্সবাজারের রামুতে ৩০ হাজার ইয়াবা লুটের ঘটনা এবং সেই অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের একাধিক অডিও রেকর্ড গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এসব অডিওতে ইয়াবা লুটের পর প্রায় ২৮ লাখ টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আইডিগুলোতে এসব অডিও আপলোড হওয়ার পর থেকেই সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অডিও রেকর্ড অনুযায়ী, রামু উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সানাউল্লাহ সেলিমের নেতৃত্বে ইয়াবার এই বড় চালানটি লুট করা হয়। অভিযোগে বলা হয়েছে, মিয়ানমার থেকে আনা এই ইয়াবার চালানটি রামু উপজেলার মন্ডল পাড়ার (সাবেক আওয়ামী লীগের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের পাড়া) বাসিন্দা মনিরের বাড়িতে যাচ্ছিল। তবে রাজারকুল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাঞ্জেগানা নামক এলাকায় চালানটি লুট হয়।
প্রাথমিকভাবে ৩০ হাজার ইয়াবার চালানটি স্থানীয় কাট্টাইল্যা পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগকারীরা বলছেন, বাজারমূল্য অনেক বেশি হলেও এই ইয়াবা মাত্র ২৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে স্থানীয় ছাত্রদল ও বিএনপির ২৩ জন নেতাকর্মীর মধ্যে ভাগাভাগি করা হয়েছে। অডিওতে দাবি করা হয়েছে, ভাগের টাকা হিসেবে ছাত্রদল আহ্বায়ক সানাউল্লাহ সেলিম একাই ১০ লাখ টাকা পেয়েছেন, এবং অন্যান্য দলীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীরা ৮-১০ হাজার থেকে ২-৩ লাখ টাকা পর্যন্ত পেয়েছেন।

এই অডিওগুলো স্থানীয় বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাকর্মী তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আইডিতে আপলোড করেছেন। ঘটনার পর থেকেই সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে।
কক্সবাজার সদর-রামু-ঈদগাঁও আসনের সাবেক বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, "ইয়াবার চালান লুটের ঘটনায় ছাত্রদল ও বিএনপির সম্পৃক্ততার কথা অডিওতে প্রচার হওয়ায় দলীয় পর্যায়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

ইয়াবা লুটের পর বিক্রির টাকা ভাগাভাগি করে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রামু উপজেলা ছাত্রদল আহ্বায়ক সানাউল্লাহ সেলিম স্থানীয় এক সংবাদকর্মী মনসুর আলম মুন্নাকে অশালীন ভাষায় গালাগাল করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সংক্রান্ত অপর একটি অডিও রেকর্ডও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

তবে ইয়াবা লুটের ঘটনায় জড়িত নন দাবি করেছেন উপজেলা ছাত্রদল আহ্বায়ক সানাউল্লাহ সেলিম। তিনি বলেন, "আমি স্থানীয় পাঞ্জেগানা বাজারটি উপজেলা পরিষদ থেকে ১৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য ইজারা নিয়েছি। ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে গফুর মেম্বার আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন।" তিনি আরও জানান, প্রকৃতপক্ষে গত ১৪ জুন ইয়াবার চালানটি লুট হয়, তবে কারা এটি করেছে, সে বিষয়ে তিনি অবগত নন।

রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার এবং স্থানীয় বিএনপি কর্মী গফুর উদ্দিন অবশ্য নিশ্চিত করেছেন, এই ইয়াবার চালানটি লুটের ঘটনা ঘটেছে এবং এর সাথে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা জড়িত।

ইয়াবা লুটের পর টাকা ভাগাভাগি করে নেওয়ার ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের ভাবমূর্তি বাড়ার বদলে তৃণমূলের এ সব ঘটনায় ক্রমশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।

রামু উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বশর বাবু এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, "আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে যাচ্ছি। কমিটি তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট দিবে। এরপর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।" রামু উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কাউসার আলম ইমু এ ঘটনার প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দাবি করেন। তিনি আরও জানান, ছাত্রদলের আহ্বায়ক সানাউল্লাহ সেলিম একজন বিবাহিত ব্যক্তি হয়ে এমনিতেই গণতান্ত্রিকভাবে ছাত্র সংগঠনে থাকতে পারেন না।

ইয়াবা লুটের পর বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ইয়াবা বিক্রির টাকা ভাগাভাগি করে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তৈয়বুর রহমান শুক্রবার (২৭ জুন) দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, " আমি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারবো না। তবে আমি ইয়াবার চালান লুটের ঘটনাটি শুনেছি। এছাড়া থানায় এখনো কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি।"

জেলা বিএনপির সভাপতি শাহাজাহান চৌধুরী এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানান। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের ঘটনা যদি ঘটে থাকে তা দুঃখজনক। যারা অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত থাকবে, সংগঠন তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

কক্সবাজার-৩ আসনের সাবেক এমপি বিএনপি নেতা লুৎফর রহমান ফেসবুকে লিখেন,  কাজল রামু উপজেলা ছাত্রদল আহ্বায়ক সানাউল্লাহ সেলিমের বিরুদ্ধে প্রচারিত অভিযোগ তদন্তে কমিটি করা হয়েছে।তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগের প্রমানসহ যোগাযোগ করার জন‍্য অনুরোধ করা হচ্ছে।অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন‍্য যথাযথ কতৃপক্ষকে অনুরোধ করা হবে।ব‍্যক্তির দায় সংগঠন বহন করবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ