- ব্র্যাকের সমীক্ষায় ভয়াবহ চিত্র, অব্যবস্থাপনার কারণে বাড়ছে পরিবেশ বিপর্যয়
- বর্জ্য পৃথকীকরণে দুর্বলতা, সচেতনতা ও অংশগ্রহণের ওপর জোর বিশেষজ্ঞদের
- পর্যটন ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাপ, কার্যকর নীতিমালা বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ
কক্সবাজার অফিসঃ পর্যটন নগরী কক্সবাজারের পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে। ব্র্যাকের ২০২৪ সালের এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, কক্সবাজার পৌরসভায় প্রতিদিন উৎপাদিত প্রায় সাড়ে ৩৪ টন প্লাস্টিক বর্জ্যের সিংহভাগই থেকে যাচ্ছে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বাইরে। এই বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য নালা ও খালের মাধ্যমে সরাসরি গিয়ে পড়ছে বঙ্গোপসাগরে, যা পরিবেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদী বিপর্যয় ডেকে আনছে।
এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে, বুধবার ঢাকায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে “বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” শীর্ষক এক জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বব্যাংক, সাউথ এশিয়া কো-অপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (এসএসিইপি) এবং ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর প্রজেক্ট সার্ভিসেস (ইউএনওপিএস)-এর সহায়তায় ব্র্যাকের ‘প্লাস্টিক ফ্রি রিভারস অ্যান্ড সিজ ফর সাউথ এশিয়া (প্লিজ)’ প্রকল্পের উদ্যোগে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়।
সংলাপে স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিডি) অতিরিক্ত সচিব এ.কে.এম. তারিকুল আলম বলেন, সমুদ্রকে প্লাস্টিকের দূষণ থেকে রক্ষা করতে হলে নদী ও খালভিত্তিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সফল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদাহরণ অনুসরণ করে নিজেদের উপযোগী সমাধান খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ জানান, মন্ত্রণালয় প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং পরিবেশবান্ধব বিকল্প পণ্যের প্রসারে কাজ করছে। তিনি ‘প্লিজ’ প্রকল্পের মাধ্যমে বর্জ্য পৃথকীকরণে ১৫ শতাংশ সাফল্যের কথা উল্লেখ করেন।
বিশ্ব ব্যাংকের পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বুশরা নিশাত বলেন, মাথাপিছু প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ কম হলেও অপর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। বর্জ্যের উৎসে পৃথকীকরণের দুর্বলতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি গৃহস্থালি পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানোর আহ্বান জানান। ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী প্লাস্টিক বর্জ্যের সমাধানে অংশীজনদের সমন্বিত উদ্যোগ ও ‘সার্কুলার ইকোনমি’র নীতি গ্রহণের ওপর জোর দেন।
আলোচনায় বক্তারা কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় বাজেট ও লোকবল নিয়োগের ওপর গুরুত্ব দেন। কক্সবাজারের মতো উপকূলীয় শহরে, যেখানে পর্যটন ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কারণে বর্জ্যের চাপ বেশি, সেখানে বর্জ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতি রয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন। জাতীয় নীতিমালা থাকলেও স্থানীয় পর্যায়ে এর কার্যকর প্রয়োগই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।
প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের গৃহস্থালি বর্জ্যের প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশই প্লাস্টিক বর্জ্য। এই দূষণ উপকূলীয় পরিবেশ এবং সমুদ্রনির্ভর মানুষের জীবন-জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলছে। ‘প্লিজ’ প্রকল্পের লক্ষ্য কক্সবাজারে বিভিন্ন সেক্টরের সমন্বয়ে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা এবং পৌরসভায় একটি টেকসই সমাধান খুঁজে বের করা।
0 মন্তব্যসমূহ