খুরুশকুলে জেলে খুন: হ্যাচারি মালিকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা, সংবাদ সম্মেলনে 'ষড়যন্ত্র'-এর অভিযোগ
কক্সবাজার অফিসঃ
কক্সবাজারের খুরুশকুলের আল্লাওয়ালা হ্যাচারিতে জেলে আলী আকবরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অবশেষে মামলা দায়ের হয়েছে। গত রোববার রাতের এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর নিহতের স্ত্রী এলমুন্নাহার মঙ্গলবার রাতে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় বাদী হয়ে এই মামলাটি করেন।
মামলায় হ্যাচারির মালিক জাহাঙ্গীর কাসেম, তার দুই ছেলে তানভীর কাসেম ও রাইয়ান কাসেম এবং হ্যাচারীর তিন কর্মচারী আনোয়ার, হোছাইন ও মিজানকে আসামি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীর কাসেম এবি পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান, তার ছেলে রাইয়ান কাসেম নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির নেতা এবং তানভীর কাসেম তার ভাই।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস খান জানান, ইতোমধ্যে এই মামলার তিন আসামি—এনসিপি নেতা রাইয়ান কাসেম এবং কর্মচারী হোছাইন ও মিজান—গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। বুধবার দুপুরে ওসি মুঠোফোনে বলেন, বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, এনসিপি নেতা রাইয়ান কাসেমকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাতে কক্সবাজার শহরে মশাল মিছিল ও বিক্ষোভ করেছে তার রাজনৈতিক সহকর্মীরা। বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, রাইয়ান কাসেমকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ রাইয়ান কাসেমকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে, যেখানে আদালত তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। একই সাথে হোসাইন ও মিজানকেও কারাগারে পাঠানো হয়।
অন্যদিকে, আজ বুধবার (৭ মে) এনসিপি নেতা রাইয়ান কাসেমের গ্রেপ্তার এবং তাদের পরিবারকে হয়রানির অভিযোগ এনে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে তার পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে রাইয়ান কাসেমের ফুফু তানিয়া কাসেম দাবি করেন, এই মামলায় রাইয়ান, তার চাচা তানভীর কাসেম এবং তার ভাই জাহাঙ্গীর কাসেমের নাম উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা সম্পূর্ণ নির্দোষ এবং এই ঘটনা হ্যাচারিতে কর্মরত কিছু কর্মচারীর সাথে ঘটেছে।
তানিয়া কাসেম আরও বলেন, হ্যাচারিতে একটি লাশ পাওয়ার খবর শুনে রাইয়ান কাসেম ও তানভীর কাসেম সেখানে যান। অথচ ঘটনার সময় তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। সেখানে গিয়ে রাইয়ান উল্টো হামলার শিকার হন। একটি স্বার্থান্বেষী মহল সুযোগ নিয়ে এই অরাজকতা ও হামলা চালিয়েছে। শুধু তাই নয়, হামলাকারীরা কোটি কোটি টাকার জিনিসপত্র ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। পরে পুলিশের সহায়তায় তারা সেখান থেকে উদ্ধার হন। আহতরা এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যেই গত মঙ্গলবার রাইয়ান কাসেমকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
এই সংবাদ সম্মেলন এবং মামলার প্রেক্ষাপটে খুরুশকুলের এই হত্যাকাণ্ড নতুন মোড় নিয়েছে। যেখানে নিহতের পরিবার ন্যায়বিচারের জন্য আইনি লড়াই শুরু করেছে, সেখানে অভিযুক্তের পরিবার এটিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দাবি করছে। পুলিশের তদন্ত এখন এই জটিল রহস্যের জট কতটা খুলতে পারে, সেটাই দেখার বিষয়।
0 মন্তব্যসমূহ