আ'লীগ নেতার অর্থায়নে বিএনপি অফিস! কক্সবাজারে রাজনৈতিক ঝড়, শাস্তির দাবিতে অনড় দল
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কক্সবাজারে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয় নির্মাণে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার অর্থায়নের বিস্ফোরক দাবি ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
জেলা প্রজন্মলীগের সহ-সভাপতি ওবায়দুল হোসাইন সম্প্রতি গত ২৯ এপ্রিল এক অডিও বার্তায় এই বিতর্কিত মন্তব্য করার পর বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা ওই নেতার কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে, ওবায়দুলের বিরুদ্ধে সুগন্ধায় সরকারি জমি দখলের মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে।
ভাইরাল হওয়া অডিও বার্তায় ওবায়দুল ইসলাম নিজেকে বিএনপির কর্মী দাবি করে জেলা বিএনপির পার্টি অফিস তার অর্থায়নে তৈরি করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন। এই মন্তব্যের পরপরই তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং এই ঘটনাকে দলের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা হিসেবে দেখেন। এমনকি, কয়েকটি গণমাধ্যমে ভুল ব্যাখ্যার সুযোগ থাকলেও, বিএনপির নেতাকর্মীরা এই বিষয়টিকে হালকাভাবে নিতে নারাজ এবং অভিযুক্ত নেতার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দলের হাইকমান্ডের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন।
জেলা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা রাশেদ মোহাম্মদ আলী এই ঘটনাকে ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ হিসেবে আখ্যায়িত করে সামাজিক মাধ্যমে তার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি জেলা সভাপতির আইনি পদক্ষেপের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন, দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হবেন এবং তদন্তের মাধ্যমেই আসল সত্য উন্মোচিত হবে।
একাধিক বিএনপি নেতাকর্মী অভিযুক্ত ওবায়দুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তার প্রচারিত বক্তব্য দলের সম্মানহানি করেছে এবং পত্রিকার ভুল ব্যাখ্যার অজুহাত তারা মানতে নারাজ। তারা দলের সিনিয়র নেতাদের কাছে এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক প্রতিকার চেয়েছেন।
জেলা ছাত্রদলের সাবেক সেক্রেটারি ফাহিমুর রহমান এই দাবিকে ‘দুঃখজনক ও ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ভূমিদস্যু ও দখলবাজ হিসেবে পরিচিত এই আওয়ামী লীগ নেতার বিএনপিকে অর্থ দিয়ে অফিস নির্মাণের জাহির করা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সাংবাদিকরা এর পেছনের রহস্য উন্মোচন করবেন এবং ভবিষ্যতে এমন দুঃসাহসিক কথা বলার জন্য ওবায়দুল ইসলামকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
জেলা বিএনপির সভাপতি শাহাজাহান চৌধুরী এই ঘটনাকে বিএনপির সুনাম ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। তিনি জানান, জেলা বিএনপি ইতিমধ্যেই ওবায়দুল ইসলামের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, তাদের দলীয় কার্যালয়ের অর্থায়নে কোনো আওয়ামী লীগ নেতার কোনো প্রকার সংশ্লিষ্টতা ছিল না এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। তিনি এই ‘ভূয়া’ কথা প্রচারের জন্য ওবায়দুল ইসলামকে আইনের আওতায় আনার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তবে, জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী প্রাথমিকভাবে এই বিষয়ে অবগত নন বলে জানান এবং ঢাকায় অবস্থান করায় বিস্তারিত জানার পর তদন্তের আশ্বাস দেন।
আওয়ামী লীগ নেতার অর্থায়নে বিএনপি অফিস নির্মাণের এই চাঞ্চল্যকর দাবি কক্সবাজারের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ এবং আইনি পদক্ষেপের দাবির মুখে এখন দেখার বিষয়, এই বিতর্কের জল কতদূর গড়ায় এবং অভিযুক্ত নেতার বিরুদ্ধে দল ও প্রশাসন কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়।
0 মন্তব্যসমূহ